• ঢাকা বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩ পৌষ ১৪৩১

জুলাই বিপ্লবের পোষ্ট মর্টেম: ছাত্র-বিএনপি নাকি সবার!

   ১২ মে ২০২৫, ০৮:৫৩ পি.এম.

কর্নেল ( অব:) মো: জগলুল আহসান

জুলাই বিপ্লবের পোষ্ট মর্টেমের আগে বিপ্লবের তাত্ত্বিক প্রেক্ষাপটটা ঘুরে আসা প্রয়োজন। এনসাইক্লোপেডিয়া অফ ব্রিটেনিকা অনুযায়ী - "Revolution, in social and political science , is a major, sudden, and hence typically violent alteration in government and is related with associations and structures". বিপ্লব বা রেভুলুশন শব্দটির উৎপত্তি ল্যাটিন শব্দ 'রেভুলুশিও' থেকে যার অর্থ হচ্ছে ঘুরে দাঁড়ানো'। বিপ্লব বলতে সাধারণভাবে আমরা বিক্ষুদ্ধ্ব জনগনের একটি  স্বত:স্ফুর্ত ও সমষ্টিক আন্দোলনকে বুঝি যেখানে শক্তি কিম্বা ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ডের মাধ্যমে বিদ্যমান রাজনৈতিক নেতৃত্ব বা ব্যবস্থার পতন ঘটিয়ে নতুন নেতৃত্ব বা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা হয়। বিপ্লব বিধ্বংসী শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে পুরাতনকে হটিয়ে নতুনকে প্রতিষ্ঠিত করে। যে কারণে দার্শণিক কাৎজ বিপ্লবের ব্যাখ্যায় বলেন -- "Revolution is to involve the downfall of an old regime through violent means and its replacement by a new regime that attempts to establish a new political and social order" 
 
ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ড নির্ভর হওয়ায় সভ্যতার উন্মেষ থেকে মধ্যযুগ পর্যন্ত বিপ্লবকে নেতিবাচক প্রক্রিয়া হিসেবেই  বিবেচনা করা হতো। তৎকালীন চার্চ কেন্দ্রিক রাষ্ট্র কিম্বা সমাজ পরিচালিত হতো ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধের ভিত্তিতে। এই মূল্যবোধসমূহ অপরিবর্তনীয় রাখাই ছিলো শাসকদলের লক্ষ্য। পরিবর্তনের বার্তা নিয়ে আসা বিপ্লব সেখানে ছিলো অনাকাংক্ষিত। যে কারণে বিপ্লবকে মূল্যবোধের  অবক্ষয়জনিত পরিণতি হিসেবেই বিবেচনা করতেন প্লেটো। রেনেঁসা পরবর্তীকালে সেকুলারিজমের বিকাশ ঘটে। ধর্মীয় রক্ষণশীলতা থেকে মুক্ত হতে থাকে সমাজ ও রাষ্ট্র। এসময়ে দার্শণিক ম্যাকিয়েভেলিই সর্বপ্রথম  বিপ্লবকে উন্নত ও অধিকতর জনকল্যাণমূলক ব্যবস্থায় উত্তরণের প্রক্রিয়া হিসেবে ব্যাখ্যা করেন। 

সংজ্ঞা ও ঐতিহাসিক বিবর্তন থেকে বিপ্লব সম্পর্কে সম্যক ধারনা পাওয়া গেলেও বিদ্রোহ, আন্দোলন,  গণ অভ্যুত্থান,  ক্যু দে' তা কিম্বা পুণর্জাগরণ মত সমার্থক বিষয়গুলোর সাথে এর সূক্ষ্ম পার্থ্যক্য বোঝা কঠিন। তবে সাধারণভাবে সময়ের ব্যাপ্তি, জনসম্পৃক্ততা ও ধ্বংসের মাত্রাই এসবের পার্থক্য নির্ধারণ করে। মাত্রার সাথে বিবেচনায় আসে সংশ্লিষ্ট আরো কিছু নিয়ামক। ডুয়েটজ ( ১৯৬৪, পৃষ্ঠা ১২০-১২৪) এর মতে নুনতম চারটি নিয়ামকের মাত্রা বিপ্লবকে সমরুপ কর্মকান্ডসমূহ থেকে আলাদা করে, এক; অংশগ্রহণকারী জনগনের আধিক্য, দুই; উদ্দেশ্য, তিন; সময়ের ব্যাপ্তি, চার; ক্ষয়ক্ষতি ও হতাহতের পরিমাণ। তবে বেশীরভাগ বিপ্লবেরই সাধারণ কিছু বৈশিষ্ট্য থাকে। এই বৈশিষ্ট্যসমূহের আলোকে জুলাই বিপ্লবের মূল্যায়ণ করা উচিত। 

প্রথমত: বিপ্লব হচ্ছে একটি দীর্ঘ মেয়াদী প্রক্রিয়া। ইতিহাস খ্যাত ফরাসী বিপ্লবের ব্যাপ্তি ছিল ১২ বছর। আমেরিকান বিপ্লবের স্থায়ীত্ব ছিল ১৯ বছর। সেক্ষেত্রে মাত্র ৩৬ দিনের আন্দোলন বা গণ বিষ্ফোরণ  বিপ্লবের দীর্ঘমেয়াদী বৈশিষ্ট্যকে ধারণ করেনা। ৩৬ দিনে কোন বিপ্লবই দানা বাঁধে না। জুলাই গণ বিষ্ফোরণও মাত্র ৩৬ দিনে দানা বাঁধেনি। রাষ্ট্র ও সমাজের কিছু গুরুত্ত্বপূর্ণ কাঠামোগত অবক্ষয় থেকেই শুরু হয় বিপ্লবের বুদবুদ। এই কাঠামোগত অবক্ষয়ই মানুষের মনে সমষ্টিক হতাশা, বঞ্চনা ও ক্ষোভের সৃষ্টি করে। যে ক্ষোভ ও হতাশা থেকেই মানুষের মনে ধীরে ধীরে দানা বাধে দ্রোহ। এরপরই সমাজ ও মানুষ রাষ্ট্র ব্যবস্থা ও সরকারের বিরুদ্ধ্বে বেপোরোয়া হয়ে ওঠে।  গুস্তাভে লি বন তার " The Psychology of Revolution"  বইয়ে এই মনস্তাত্বিক প্রক্রিয়াকে বিষদভাবে বর্ণনা করেছেন। বিপ্লব পরবর্তী  ঘটনাবলী ও  ফেজসমূহ বাদ দিলে একটা বিপ্লব মূলত: চারটি প্রধান ফেজ বা পর্বের মধ্য দিয়ে সংগঠিত হয়।

আইডেন্টিফিকেশন ফেজ, মডারেট ফেজ, র‍্যাডিক্যাল ফেজ,  ডেস্ট্রাকটিভ ফেজ।  এই পর্বসমূহের প্রেক্ষাপটে জুলাই গণভ্যুত্থানকে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে ব্যাখ্যা করা যায়। জুলাই অভ্যুত্থানের আইডেন্টিফিকেশন ফেজের শুরু সেই ২০০৯ সালে ফ্যাসিষ্ট আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর। যে ফেজে বিডিআর হত্যাকান্ড, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যাবস্থা বাতিল,  দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন, নির্বাচন ব্যাবস্থা ধ্বংসকরন, বিরোধী দলীয় নেতাদের নির্বাসন, মিথ্যা মামলায় জেল ও ফাসির মাধ্যমে নেতৃত্ব শুণ্যকরন, রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় আয়নাঘর,  গুম, খুন, বিপুল অর্থ পাচার, সম্পদের অসম বন্টন,  সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ন্ত্রন আইন এসবের ভিতর দিয়ে মানুষ সরকারের ফ্যাসিবাদী  রুপকে আইডেন্টিফাই  বা চিনতে  শুরু করে। জনগণের কাছে  এই ফ্যাসিবাদী প্রক্রিয়াকে পরিচিতকরনের প্রাথমিক দায়ীত্বটি  পালন করে বি এন পি ও সমমনাক বিরোধী রাজনৈতিক দলসমূহ। দ্বিতীয় পর্বে আসে মডারেট ফেজ; এ পর্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের প্রতিবাদে বি এন পি নির্বাচন বর্জন করে।

সরকারের ফ্যাসিবাদী চরিত্রকে আন্তর্জাতিকীকরণে সবচেয়ে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখে বিএনপি'র নির্বাচন বর্জন। একই সাথে বিচার ব্যাবস্থায় সরকারী নিয়ন্ত্রনের প্রতিবাদ, ক্রস ফায়ার ও গুম খুনের বিরুদ্ধ্বে শক্ত অবস্থান, অর্থ পাচার ও চলমান অনাচার আর বৈষম্য নিয়ে বিভিন্ন ফোরাম ও সভা সমিতির মাধ্যমে জনগণকে সংগঠিত করার প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দেয় বি এন পি, সমমনা দল, সুশীল সমাজ। কুটনৈতিক মহলেও ফ্যাসীবাদ বিরোধী জনমত গড়ে তোলা হয়। এরপর আসে র‍্যাডিক্যাল ফেজ; উত্থাপিত দাবী সমূহ  না মানার প্রেক্ষিতে মানুষের ভিতর রাগ, ক্রোধ ও ক্ষোভ পুঞ্জীভূত হতে থাকে।  

শুরু হয় আক্রমণাত্মক প্রতিক্রিয়া। তত্ত্বাবধায়ক সরকার পূণ:প্রতিষ্ঠার জন্য বিক্ষোভ,  শাপলা চত্ত্বরে  হেফাজতের বিশাল সমাবেশ, দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধ্বে হয়রানিমূলক মামলা তুলে নেয়ার জন্য শক্তিশালী ভাবে রাজপথে নামে বি এন পি। সুশীল  সমাজ ও সাধারন মানুষ নিজেদের মত করে প্রতিবাদ জানাতে থাকে অপশাসন, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধ্বি ও অনাচারের বিরুদ্ধ্ব্রে। এর ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালে আবার নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি। বিএনপি'র নির্বাচন বর্জন এদেশে গণতন্ত্রের সংকটকে আন্তর্জাতিকরনে আবারো বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখে। সবশেষে আসে গতবছর জুলাইয়ের ডেস্ট্রাকটিভ ফেজ; যা শুরু হয় ছাত্রদের কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে কিন্তু ব্যাপক আকার ধারন করে সরকার কতৃক  নির্মমভাবে বল প্রয়োগের ফলে। ছাত্রদের সাথে দলে দলে নেমে আসে তাদের অভিভাবক, ভাই, বোন, সাধারণ মানুষ, রাজনৈতিক দল,  শ্রমিক, রিকশাওয়ালাসহ সকল স্তরের জনগণ। বিক্ষুদ্ধ্ব  ও উত্তাল জনতা পতন ঘটায় আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের। ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন শেখ হাসিনা। পুরো প্রক্রিয়াটি কিন্তু দীর্ঘমেয়াদী। মাত্র ৩৬ দিনে এটা হয় না। ৩৬ দিনের আন্দোলনে মানুষ গুলির সামনে বুক পেতে দেয়ার মত বেপোরোয়া হয়ে ওঠেনি। উঠেছে বিগত ১৭ বছরের অপশাসন, রাজনৈতিক দূর্বৃত্তায়ন, মানুষের  রাজনৈতিক ও নাগরিক অধিকার হরণ, গুম, খুন, অবিচার, অত্যাচার ও চক্রান্তের দীর্ঘমেয়াদী ও সামগ্রিক প্রভাবে।

ফলশ্রুতিতে রাষ্ট্র, সমাজ ও জনগনের মন ও মননে ধীরে ধীরে পুঞ্জীভূত হয়েছে হতাশা, ক্ষোভ ও দ্রোহ যার চুড়ান্ত বহি:প্রকাশ ঘটেছে ৩৬ দিনের গন বিষ্ফোরণে। এই জুলাই গণবিষ্ফোরণের ভিত্তি রচিত হয়েছে সুদীর্ঘ ১৭ বছরের ফ্যাসিবাদী অপশাসনের ভিতর দিয়ে। জুলাইয়ের গণ বিস্ফোরণকে তাই বিচ্ছিন্ন কিম্বা স্বতন্ত্র  কোন আন্দোলন হিসেবে বিবেচনার অবকাশ নেই।যদিও জুলাই আন্দোলনের স্পর্ধা, সাহস ও ত্যাগের মহাত্ম্য প্রশ্নাতীত। এর মাধ্যমেই প্রজ্জ্বলিত হয়েছে ১৭ বছরের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ ও দ্রোহ। শুধুমাত্র ৩৬ দিনের আন্দোলন বিপ্লবের সাংগাঠনিক  প্রক্রিয়া ও সামগ্রিকতাকে ধারণ করে না। এই জনবিষ্ফোরণের সামগ্রিকতা প্রোথিত হয়েছে বিগত ১৭ বছর ধরে  নিপীড়িত ও বিক্ষুদ্ধ জনগণকে সংগঠিত করার সুদীর্ঘ প্রক্রিয়ায়। প্রধান বিরোধী দল হিসেবে যার ধারাবাহিক নেতৃত্বে দিয়ে এসেছে  বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল  আর  ফ্যাসীবাদী চক্রান্তের কারণে  নির্বাসিত দেশ নেতা তারেক জিয়া। এ সত্য অস্বীকারের কোন উপায় নেই।

দ্বিতীয়ত:  বিপ্লব হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে চলমান অপশাসন, শোষণ, অন্যায়, অবিচার ও বৈষম্যের বিরুদ্ধ্বে দিনে দিনে জমে ওঠা পুঞ্জীভূত  বঞ্চনা, হতাশা ও ক্ষোভের চূড়ান্ত ও ধ্বংসাত্মক বিস্ফোরণ।  একটা বিপ্লব নানাবিধ কারনে হতে পারে। জ্যাক গোল্ডস্টোন তার "রেভুলুশন" বইয়ে ( পৃষ্ঠা ১০-২৫)  বিপ্লবের সকল কারণসমূহকে  দুটি মৌলিক ক্যাটাগরীতে ভাগ করেছেন; স্ট্রাকচারাল বা দীর্ঘমেয়াদী কাঠামোগত কারণ ও  ট্রাঞ্জিয়েন্ট বা স্বল্পমেয়াদী কার্যকরী কারণ। "Revolutions have both structural and transient causes; structural causes are long-term and large-scale trends that undermine existing social institutions and relationships and transient causes are contingent events, or actions by particular individuals or groups, that reveal the impact of longer term trends and often galvanize revolutionary oppositions to take further action."  (Goldstone, Revolutions Page 10-25)। স্ট্রাকচারাল কারনসমূহ হচ্ছে দীর্ঘদিনের অপশাসন, বৈষম্য, শোষণ, অত্যাচার, অনাচার, অধিকারহরণ, বিচারহীনতা ও নিষ্পেষনের বিরুদ্ধ্বে ধীরে ধীরে মানুষের মনে পুঞ্জীভূত হতাশা, ক্ষোভ ও দ্রোহের সমষ্টি যা সমাজের মৌলিক কাঠামোর উপর মানুষের আস্থাকে বিনষ্ট করে। অন্যদিকে ট্রানজিয়েন্ট কারণসমূহ হচ্ছে সেই সকল স্বল্পমেয়াদী কিন্তু কার্যকরী কারণ যা স্টাকচারাল কারণসমূহ পরিণত হওয়ার প্রেক্ষিতে বিক্ষুদ্ধ্ব জনগনকে  চূড়ান্ত আঘাতের জন্য প্রজ্জ্বলিত করে। ইতিহাস থেকে দেখা যায় প্রতিটি বিপ্লবই কোন বিশেষ ঘটনার ভিতর দিয়ে শুরু বা প্রজ্জ্বলিত হয়েছে। ফ্রেঞ্চ রেভুলুশন শুরু হয়েছিল প্রিন্সেস আনা মারির--" জনগণ রুটি না পেলে কেক খাক" এই উক্তি থেকে। নব্বইয়ের গণ অভ্য্যুত্থান চূড়ান্ত বেগ পেয়েছিল ডা: মিলন হত্যার ঘটনা দিয়ে। জুলাইয়ের গণ বিষ্ফোরণও গতি পেয়েছিল আবু সাইদের বুক চিতিয়ে মৃত্যু বরণ করার ঘটনা থেকে।

এই ট্রাঞ্জিয়েন্ট কারণসমূহ  বা ঘটনাগুলো তখনই সমস্ত জনগনকে সংঘবদ্ধ্ব করে যখন স্টাকচারাল কারণসমূহ পরিণত পর্যায়ে পৌঁছায়। সে বিচারে বিগত ১৭ বছরের  অন্যায়, অনিয়ম, অত্যাচার, অবিচার এবং তৎসংশ্লিষ্ট  প্রতিক্রিয়া, প্রতিবাদ ও পুঞ্জীভূত দ্রোহ ছিলো এ বিপ্লবের স্টাকচারাল রিজন আর  ছাত্রদের নেতৃত্বে ৩৬ দিনের গণ বিস্ফোরণ ছিল ট্রাঞ্জিয়েন্ট রিজন। ১৭ বছরের অপশাসন থেকে উদ্ভূত অসন্তোষ,  ঘৃণা ও দ্রোহ পুঞ্জীভূত হয়েছিল বলেই  ছাত্রদের গন্ডী পেরিয়ে খুব অল্প সময়েই এ আন্দোলন  ছড়িয়ে পড়েছিল সর্বস্তরের সাধারণ মানুষের মাঝে৷ আন্দোলনরত ছাত্রদের সাথে খুব দ্রুত মেরুকরণ ঘটেছিল ১৭ বছর যাবৎ বঞ্চিত, শোষিত, অত্যাচারিত ও বিক্ষুদ্ধ্ব জনগনের। এ অভ্যুত্থানকে তাই শুধুমাত্র ছাত্র কিম্বা কোন একক গোষ্ঠীর অথবা হঠাৎ করে উদ্ভূত বিচ্ছিন্ন কোন ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত করার কোন অবকাশ নেই। এ অভ্যুত্থান ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধ্বে সকল স্তরের জনগনের দীর্ঘদিন ধরে ধারাবাহিক আন্দোলন ও  সংগ্রামের  ফসল। এর বেসিক বা স্ট্রাকচারাল রিজন সমূহকে সুদীর্ঘ ১৭ বছর ধরে বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মকান্ডের মধ্য দিয়ে পরিণত পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল। শত প্রতিকুলতার মাঝেও বিদেশ থেকে যার বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দিয়েছেন দেশ নেতা তারেক জিয়া।

তৃতীয়ত:  বিপ্লব একটি দেশের রাজনৈতিক, আর্থ-সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অন্যান্য ক্ষেত্রসমুহের অবক্ষয় থেকে উদ্ভূত একটি সামগ্রিক প্রক্রিয়া। ঐতিহাসিকভাবে কোন একক কিম্বা ক্ষুদ্র ইস্যুকে কেন্দ্র করে স্বল্পসময়ে বিপ্লব সংগঠিত হয়নি। জুলাই অভ্যুথান শুরু  হয়েছিল ছাত্রদের বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন দিয়ে যার পরিধি ও লক্ষ্য ছিলো সীমিত। ফ্যাসীবাদী সরকারের নির্মম ও পাশবিক আচরণে অল্পদিনেই ছাত্রদের সাথে যোগ দেয় তাদের অভিভাবক, শিক্ষক, তরুণ, তরুনী, শিশু, কিশোর, রাজনৈতিক দল, শ্রমিক, দিনমজুর ও ব্যবসায়ীসহ সর্বস্তরের মানুষ। খুব দ্রুত একটি গণ জোয়ারে পরিণত হয় এই আন্দোলন। এত অল্প সময়ে ছাত্রদের সাথে জনগনের বিশাল অংশের  তড়িৎ মেরুকরণের কারন বিগত ১৭ বছরে রাষ্ট্রের সর্বস্তরে শোষিত ও বঞ্চিত জনগন এই চূড়ান্ত পর্বের জন্য সংগঠিত ও প্রস্তত হয়েছিল। ব্যর্থ কিংবা সফল যাই বলি না কেন, এই সুদীর্ঘ রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় বি এন পি ই ছিলো অগ্রদূত ও এক নি:সঙ্গ শেরপা।

১৭ বছরের আন্দোলনে ক্রস ফায়ার ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে বিএনপি'র  ৪৭৭১ জনকে, মামলা হয়েছে ১ লক্ষ ৪০ হাজারের বিরুদ্ধ্বে, আসামী হয়েছে ৬০ লাখ, গুম করা হয়েছে ১২০৪, জুলাই আন্দোলনে নিহত হয়েছে ২২৪ জন। জাতীয়তাবাদী দলের নিপীড়িত ও অত্যাচারিত এই বিশাল কর্মীবাহিনীর অবদান ও আত্মত্যাগেই প্রোথিত হয়েছে জুলাই অভ্যুথানের শেকড়। তারা নির্বাচন বর্জন করেছে, রাতের ভোটের বিরুদ্ধ্বে সোচ্চার হয়েছে, মানুষের অধিকার হরণের ঘৃণ্য প্রক্রিয়াকে আন্তর্জাতিকীকরন করেছে। বিচার ব্যবস্থাকে ধ্বংস করার বিরুদ্ধ্বে দাড়িয়েছে। তাদের অসংখ্য নেতা কর্মী মামলা খেয়েছে, জেল খেটেছে, গুম হয়েছে । এভাবেই ধীরে ধীরে জনগণ ও জনমতকে সংগঠিত করে বিপ্লবের  চুড়ান্ত পর্বের জন্য প্রস্তুত করেছে বি এন পি। সে প্রেক্ষিতে বলা  যেতেই পারে বিএনপি'র সুদীর্ঘ ১৭ বছরের আন্দোলনের  ফসলকেই ঘরে তুলেছে জুলাই অভ্যুত্থানের কুশীলবরা।

চতুর্থত: বিপ্লব সংগঠিত হয় দীর্ঘমেয়াদে সুনির্দিষ্ট কিছু ধাপের মধ্য দিয়ে আর শেষ হয় চূড়ান্ত আঘাতের মাধ্যমে পরিবর্তন ঘটিয়ে। বিপ্লবের জন্য কোন জনগোষ্ঠীর মনস্তাত্বিক পরিবর্তন হঠাত করে হয় না। হয় ধাপে ধাপে । জুলাই অভ্যুত্থানও সেই ২০০৯ থেকে বিভিন্ন ধাপের মধ্য দিয়ে বিপ্লবের চূড়ান্ত পর্বে পৌছেছে।  আওয়ামী ফ্যাসিষ্টদের রাজনৈতিক দূর্বৃত্তায়ন শুরু হয়েছিল মইনুদ্দীন-ফখরুদ্দীন সরকারের সাথে যোগসাজশে।  দেশ নেতা তারেক জিয়াকে বিদেশে প্রেরনের ভিতর দিয়ে। এটা ছিল ফ্যাসীবাদ প্রতিষ্ঠার প্রথম ধাপ। দ্বিতীয় ধাপ ছিলো আঁতাতের নির্বাচনের মাধ্যমে দুই তৃতীয়াংশ মেজরিটি দিয়ে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনা। যার ফলে নিরংকুশ ক্ষমতার অধিকারী হয় দলটি। যে ক্ষমতাবলে ২০১০ সালে পঞ্চদশ  সংশোধনীর মাধ্যমে তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে। নিশ্চিত করে দলীয় বা আওয়ামী  সরকারের অধীনে নির্বাচন। তত্ত্ববধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের বিষয়টি আওয়ামী ফ্যাসিবাদ সম্পর্কে জনমনে প্রথম সন্দেহ জাগায়। এরপর তৃতীয় ধাপে কারচুপি ও রাতের ভোটের মাধ্যমে পেরেক ঠুকে দেয় নির্বাচন  ব্যবস্থার কফিনে। সুগম করা হয় কারচুপির ভোটে আওয়ামী লীগের বার বার ক্ষমতায় আসার পথ। এভাবেই পার্শ্ববর্তী দেশের প্রেসক্রিপশনে ৪০ বছর ক্ষমতায় থাকার পরিকল্পনা আঁটে ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগ ও শেখ হাসিনা। এই প্রথম তিনটি ধাপ সম্পন্নকরনের মাধ্যমেই সংহত হয় আওয়ামী ফ্যাসিবাদ।

তবে নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস ও ভোটের মৌলিক অধিকার হারনোয় জনমনে  দানা বাঁধতে থাকে অসন্তোষ, হতাশা ও ক্ষোভ।  ফ্যাদিবাদের চতুর্থ ধাপ শুরু হয় নির্বাচন ব্যাবস্থাকে চূড়ান্তভাবে  নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয়ার পর। ক্ষমতা কুক্ষীগত রাখার প্রক্রিয়া পাকা করে বেপোরোয়া হয়ে ওঠে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনা। পর্যায়ক্রমে ধ্বংস করে এদেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোকে,  সামরিক বাহিনী,  অর্থনৈতিক  ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ  দেশের প্রতিটি জাতীয় শক্তিকে ( Elements of National Power) যারা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধ্বে শক্ত অবস্থান নিতে পারতো। ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠার এই গুরুত্ত্বপূর্ণ ধাপসমুহ বাস্তবায়নের সময় প্রতিরোধ গড়ার প্রয়োজনীয়তা ছিল ব্যাপক। ছাত্ররা কিন্তু  সে সময় প্রতিবাদে নামেনি। নেমেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল। বিদেশ থেকে যার নেতৃত্ব দিয়েছেন দেশ নেতা তারেক জিয়া। রাজনৈতিকভাবে জেল জুলুম  ও গুম খুনের বিপদ মাথায় নিয়েও বি এন পি এসব  কর্মকান্ড ও প্রক্রিয়ার বৈধতা নিয়ে বার বার প্রশ্ন তুলেছে। মানুষকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছে এসব রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত ব্যবস্থা ও প্রক্রিয়া। জনমত গড়ে তুলেছে অন্যায় ও  অবিচারের বিরুদ্ধ্বে। সংগঠিত করেছে  আন্তর্জাতিক মতবাদ। শোষণ, অন্যায় ও বঞ্চনার প্রতিবাদে ধাপে ধাপে মানুষ আওয়ামী লীগকে ঘৃনা করতে শুরু করেছে। আওয়ামী অপশাসন, অন্যায়,  দূর্নীতি ও ফ্যাসিবাদী আচরণকে বিভিন্ন ফোরামে তুলে ধরে প্রাথমিকভাবে এ ঘৃণার সুত্রপাত ঘটিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ও দেশনেতা তারেক জিয়া।

পঞ্চমত: একটি বিপ্লবে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার পাশাপাশি সরকারী ও আর্থ-সামাজিক প্রতিষ্ঠান, সামরিক, বেসামরিক, সামাজিক সংস্থা, মিডিয়া এবং সুশীল সমাজেরও সমান্তরাল অবদান থাকে। বিগত ১৭ বছরে প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রতিবাদ কিম্বা ত্যাগের স্বীকার হয়েছে মানুষ যার যার অবস্থান থেকে। বিডিআরে ৫৭ জন অফিসারকে হত্যা, ৫ জন ক্যাপ্টেনকে মিথ্যা বোমা হামলায় ৫ বছর করে জেল,  সাগর-রুণী হত্যা, নারায়নগঞ্জের সাত খুন, ইলিয়াস আলীর গুম, ক্রস ফায়ারে ইকরামুলের কন্যাদ্বয়ের কান্না, শাপলা চত্ত্বরে গণহত্যা,  বিডিআর কিলিং নিয়ে প্রহসনের বিচার,  রাণা প্লাজা নাটক, ধর্ষণে সেঞ্চুরী, বিচারপতি সিনহার অপসারন, বিশ্বজিত, আবরার ও মেজর সিনহার নির্মম হত্যাকান্ড, শেয়ার মার্কেট লুট, লক্ষ কোটি টাকা পাচারের মত অনিয়ম, অবিচার  ও শোষণের স্বীকার মানুষের পুঞ্জীভূত আর্তনাদ ও দ্রোহের ফল এই জুলাই গণ বিষ্ফোরণ।

১৭ বছরের এই সুদীর্ঘ প্রক্রিয়াকে যারা খাটো করে দেখেন তারা সংকীর্ণমনা এবং কোন দূরভীসন্ধি নিয়েই তারা এ কাজটি করেন। এর পিছনে রয়েছে দেশ্ নেত্রী খালেদা জিয়ার মত একজন স্বামী পুত্রহীন  বর্ষীয়ান ও অসুস্থ নেত্রীকে ৪০ বছরের স্মৃতিবিজড়িত গৃহ থেকে উৎখাত ও মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে জেলে প্রেরনের মত নমরুদীয় কর্মকান্ডের অভিশাপ। রয়েছে মিথ্যা মামলায় অত্যাচারিত, আহত ও চক্রান্তমূলক বিচারে দেশান্তরী, বৃদ্ধ্বা মাতা কিম্বা অনুজের লাশ দাফনে দেশে আসতে না পারা আগামী দিনের নেতা তারেক জিয়ার সুদীর্ঘ ১৭ বছরের হতাশা ও বেদনার দীর্ঘশ্বাস। ১৭ বছরের এত ত্যাগ ও অবদানকে অস্বীকার করে জুলাইয়ের গণ বিষ্ফোরণকে যারা শুধুমাত্র নিজেদের ৩৬ দিনের আন্দোলনের ফসল বলে দাবী করে তারা এই বিপ্লবের মহত্ত্বকে খাটো করার হীন তৎপরতায় লিপ্ত। তাদের দৃষ্টি ও বোধ সীমিত। হৃদয় সংকুচিত। 

লিখাটি শেষ করবো সার্জিস আলম ও অন্যান্য এনসিপি নেতাদের একটি ব্যাঙ্গাত্মক কমেন্টের উত্তর দিয়ে-- " যে বিএনপি ১৭ বছরে একটা বালির ট্রাক সরাতে পারেনি এ বিপ্লবে তাদের কি অবদান!" সে হিসেবে ১৭ বছরে শুধু বিএনপি কেন? জামাত, জাতীয় পার্টি কিম্বা অন্যান্য দলের কি অবদান? কি করেছে তারা? রাষ্ট্রযন্ত্র, প্রশাসন, সামরিক, বেসামরিক, বিচার বিভাগ, শিক্ষা, সংস্কৃতি প্রতিটি ক্ষেত্রেই কে কি করছে? এমন কি ছাত্ররাই বা কি করেছে? আমি তো নেটে মুজিব কোট পরা অনেক নেতার সাথেই সার্জিস আলমের হাস্যোজ্জ্বল ছবি দেখি। যদি বলি সার্জিসের মত বাকী অনেকেই  সে সময় তলে তলে আওয়মী  লীগের সাথে আঁতাত করেছে ও ঝোপ বুঝে কোপ মেরেছে। ফারুকী আজ বিপ্লবের কর্ণধার! কে না জানে স্ত্রী তিশা সহ  সে কোন কোন আওয়ামী নেতার বাড়ী যেত। এরা সবাই আওয়ামী লীগের ছায়াতলে থেকেছে কিন্তু আজ বিরাট বিপ্লবী।  ২০১৪ পরবর্তী কঠিন সময়ে একমাত্র বিএনপি'ই আওয়ামী ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধ্বে জোড়ালো প্রতিবাদ করেছে। সার্জিসসহ বাকীরা করেছে আঁতাত। 

আমি নিজে স্বাক্ষী ২০০৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারীতে সাভার সেনানীবাস হতে একদল অফিসার  সংগঠিত হয়ে পিলখানায় মুভ করতে যায়। নিজেদের মধ্যে যুদ্ধ্ব ও এরেষ্টের হুমকী দিয়ে থামানো হয় তাদের। ২০১১ সালে সাভারেই জেনারেল মইন ইউ আহমেদের সাথে সেনাবাহিনীর লিডারশীপ ফেইলুর নিয়ে তর্কে লিপ্ত হয় তারা। ডি জি এফ আই আর র (RAW) এর টার্গেট লিস্টে নাম উঠে যায় তাদের। তারা জানতো তাদের উপর যে কোন দিন নেমে আসবে  হাসিনার খড়গ কিন্তু কখন কিভাবে তা জানা ছিলোনা। প্রতিটা দিন কাটতো উতকন্ঠায়। তারা সবাই ছিলো ভালো ও প্রফেশনাল আপরাইট অফিসার যারা সেনবাহিনীতে ‘র '( RAW) এর আধিপত্য কে মেনে নেয়নি। যার ফলে তারা ছিল টার্গেট। তাদের পোষ্টিং দেয়া হতো খোলাহাটি কিম্বা খাড়াছড়ি। উচ্চতর সকল দেশী ও বিদেশী কোর্সের জন্য একের পর এক নট রিকমেন্ডেড করা হয় তাদের। অনির্দিস্ট কালের জন্য৷ বন্ধ করে রাখা হয় ইউ এন মিশন ও সকল বিদেশী কোর্স।

অবশেষে ২০১২/১৩ সালে সামরিক অভ্যুত্থান পরিকল্পনার সাজানো অভিযোগে কোর্ট মার্শালে নিয়ে যাওয়া হয় তাদের। তদন্ত ও নিরাপত্তার নামে  প্রায় দীর্ঘ এক বছর ধরে অফিসার মেসে অন্তরীন রাখা হয় তাদের। নতুন নতুন তদন্তে ভয়ানক মানসিক যন্ত্রনা দেয়া হতো। প্রতিটা মুহুর্তে গোয়েন্দা নজরদারীতে রাখা হতো। বাসার সামনে গাড়ীর শব্দ শুনলেই তার উৎকন্ঠিত হয়ে উঠতো। কখন না গুম করে নিয়ে যায় তাদের। এই যে ১৭ বছর ধরে মানসিক, সামাজিক, আর্থিক ও জীবন নাশের হুমকীতে থাকার টর্চার সেটা সার্জিস আলমরা বুঝবেনা। কারন তাদের কাছে হারুনের ভাতের হোটেলে ৭ দিন থাকা মানেই বিরাট বিপ্লব। ১৭ বছর ধরে এই যন্ত্রণায় ভুগেছে তারা। সবচেয়ে  বেশী ভুগেছি আমি। কারন ওই অভ্যুত্থান প্ল্যানে আমার নাম দেয়া ছিল লীডার হিসেবে। ব্যক্তিগত উদাহরণ আনার জন্য দু:খিত। আনতে হলো কারণ অর্বাচীন সার্জিস তার উক্তির মাধ্যমে আমাদের মত ৬০ জন প্রকৃত সোলজার ও দেশের আপামর জব সাধারণের ১৭ বছরের ত্যাগ ও তিতিক্ষাকে অসন্মান করেছেন।

বিপ্লবে দৃশ্যমান ও অদৃশ্য কিছু অবদান থাকে। বাস্তিল দূর্গ ভাঙ্গার ঘটনাটি ফ্রেঞ্চ রেভুলুশনের দৃশ্যমান ঘটনা কিন্তু রুশো মন্টেস্কুর প্রেরণাদায়ী লিখা-"Man is born free but he is always kept in chain" এর প্রভাব দৃশ্যমান না হলেও ফুর্গ ভাঙার  দৃশ্যমান। ৬০ এর দশকে চে' গুয়েভারা বিপ্লবকে যে রোমান্টিক আবহ দিয়েছিলেন সেই  অদৃশ্য আবহে দক্ষিণ আমেরিকার অনেক দেশে আজো বিপ্লবের ঝড়। মাঝে মাঝে দৃশ্যমান প্রভাবের চেয়েও অদৃশ্য প্রভাব বেশী শক্তিশালী। মাঝে মাঝে নীরবতাও হতে পারে শ্লোগানের চেয়েও বলিষ্ঠ কোন শ্লোগান। মাঝে মাঝে নির্বাক চোখের ভাষাও, পোষ্টারে লিখা কথার চেয়ে শক্তিশালী কথা বলে। সে ভাষা বুঝতে জ্ঞ্যান ও প্রজ্ঞা লাগে। অর্বাচীনরা তা বোঝার কথা নয়।

লেখক: কর্নেল ( অব:) মো: জগলুল আহসান, এসইউপি, পিএসসি, জি, প্রাক্তন অতিরিক্ত পরিচালক (রিসার্চ), সেন্টার ফর হায়ার স্টাডিজ, বিইউপি।

ভিওডি বাংলা/ এমএইচ

[নিবন্ধ, সাক্ষাৎকার, প্রতিক্রিয়া প্রভৃতিতে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। ভিওডি বাংলা সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক, আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের, ভিওডি বাংলা কর্তৃপক্ষের নয়] 

  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
বিচক্ষণ ও বাস্তববাদী জিয়াউর রহমান
বিচক্ষণ ও বাস্তববাদী জিয়াউর রহমান
“চির ভাস্বর : জনতার জিয়া”
“চির ভাস্বর : জনতার জিয়া”
বেকায়দায় ফেলতেই ভারতীয় পুশইন
বেকায়দায় ফেলতেই ভারতীয় পুশইন