রাজপথে এনসিপি-জামায়াত, কী করবে বিএনপি?


জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে আন্দোলন জোরদার হচ্ছে। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এবং অন্যান্য রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা এই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছেন। তবে, বিএনপির অনুপস্থিতি নিয়ে রাজনৈতিক মহলে নানা আলোচনা চলছে। দলটির অনুপস্থিতি দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম সরাসরি বিএনপিকে এই আন্দোলনে যোগদানের আহ্বান জানালেও, বিএনপি এখনো এই বিষয়ে কোনো সুস্পষ্ট অবস্থান নেয়নি ।
সারজিস আলম বলেন, বিএনপি এবং তার অঙ্গসংগঠন ব্যতীত সকল রাজনৈতিক দল এখন শাহবাগে। বিএনপি এলে জুলাইয়ের ঐক্য পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে। ঐক্যবদ্ধ শাহবাগ বিএনপির অপেক্ষায়।
এদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান শুক্রবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হবে কি হবে না; সেটা তো বিএনপির বক্তব্যের বিষয় নয়। এটা নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নিতে পারে, সরকার সিদ্ধান্ত নিতে পারে। যেসব রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের কথা বলছে তারা তাদের বক্তব্যে বলেছে। কাজেই বিএনপি হিসেবে তো আমরা এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার মালিক নই। আমাদের মহাসচিব (মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর) ইতোমধ্যে বলেছেন যে, জনগণের সিদ্ধান্তের বিষয় এটা। জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে কারা নির্বাচন করবে কি না করবে।
নিজের যুক্তি তুলে ধরেন তিনি বলেন, আপনি আমাকে জিজ্ঞাসা করেছেন, আওয়ামী লীগ নির্বাচনে আসবে কি আসবে না বা তাদের গ্রহণ করা হবে কি হবে না বা তাদের নিষিদ্ধ করা হবে কি হবে না। আমি যদি বলি এই প্রশ্নটা আওয়ামী লীগকে কেন জিজ্ঞাসা করেন না। তারা কি আসলেই নির্বাচন করতে চায়, তারা কি আসলেই গণতন্ত্র চায়? সেটা তো আওয়ামী লীগকে বলতে হবে।
দলের স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন রাজধানীতে একটি অনুষ্ঠানে বক্তব্যে বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগকে মানুষ দেখতে পারছে না। কারণ, তারা তাদের অপকর্মের ফল পাচ্ছে। এই আওয়ামী লীগের জনগণের কাছে কোনো দায়বদ্ধতা ছিল না। তাই বিগত আমলে কোনো ভোট হয়নি। আওয়ামী লীগ যে কাজ করেছে, তার প্রায়শ্চিত্ত অবশ্যই তাদের করতে হবে।’
এই অবস্থানে অনেকেই মনে করছেন, বিএনপি আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে সরাসরি অংশ না নিয়ে একটি কৌশলগত অবস্থান নিচ্ছে। তবে এনসিপি ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে বিএনপির এই নীরবতাকে সমালোচনার চোখে দেখা হচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিএনপির এই অবস্থান তাদের জন্য একটি উভয় সংকটের সৃষ্টি করেছে। একদিকে, তারা যদি আন্দোলনে যোগ না দেয়, তবে জুলাই আন্দোলনের প্রতি তাদের কমিটমেন্ট নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে।
অন্যদিকে আন্দোলনে যোগ দিলে দ্রুত নির্বাচনের দাবিতে তাদের অবস্থান কিছুটা দুর্বল হতে পারে। তাদের দাবি কিছুদিনের জন্য হলেও স্থগিত হয়ে যেতে পারে।
এই পরিস্থিতিতে, বিএনপির সামনে একটি কঠিন সিদ্ধান্তের সময় এসেছে। তাদেরকে নির্ধারণ করতে হবে, তারা কি আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করবে, নাকি তাদের নিজস্ব রাজনৈতিক কৌশল বজায় রাখবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিএনপি বেশ কিছু বিরূপ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারে। যেমন- নৈতিক সংকট: শাহবাগের আন্দোলনে অংশ না নিয়ে বিএনপি তাদের পূর্বঘোষিত ‘জুলাই আন্দোলনের’ চেতনার প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে সরে আসছে এমন প্রশ্ন উঠছে। এতে তাদের উপর জনআস্থা ক্ষুণ্ণ হতে পারে।
রাজনৈতিক বিচ্ছিন্নতা: এনসিপিসহ নতুন উদীয়মান শক্তিগুলোর নেতৃত্বে যে রাজনৈতিক মঞ্চ তৈরি হচ্ছে, তাতে বিএনপি অনুপস্থিত থাকলে তারা মূল ধারার বাইরে চলে যেতে পারে।
রাজনৈতিক দ্বিধা: একদিকে নির্বাচনমুখী কৌশল, অন্যদিকে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের মতো প্রতিক্রিয়াশীল দাবিতে যুক্ত হওয়া—এই দুই অবস্থান সাংঘর্ষিক। এতে দলটির কৌশলগত বিভ্রান্তি আরও প্রকট হতে পারে।
তবে এক্ষেত্রে দলটির হাতে এই সংকট মোকাবিলায় বেশ কিছু কৌশল রয়েছে বলে দেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অভিমত। তাদের বক্তব্য- বিএনপি এই সংকট মোকাবিলা করতে পারে সহজেই। এক্ষেত্রে তাদের অভিমত হলো-
নির্দিষ্ট অবস্থান স্পষ্ট করা: বিএনপিকে সুস্পষ্টভাবে জানাতে হবে, তারা আওয়ামী লীগের বিচার চায় নাকি নিষিদ্ধ করতে চায়। দ্ব্যর্থহীন বার্তা দিলে রাজনৈতিক বিভ্রান্তি কমবে।
আন্দোলন ও নির্বাচন দুই কৌশলেই ভারসাম্য রাখা: তারা চাইলে এনসিপি ও শাহবাগের আন্দোলনের সঙ্গে "নৈতিক সংহতি" প্রকাশ করে রাজনৈতিকভাবে নিজেকে দূরে রাখার কৌশল নিতে পারে। এতে দ্বৈত সংকট এড়ানো সম্ভব।
আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে বিষয়টি তুলে ধরা: আন্তর্জাতিক মহলে রাজনৈতিক নিষিদ্ধকরণ নিয়ে উদ্বেগ থাকায় বিএনপি চাইলে সাংবিধানিক ও আইনি বিচারের দাবি তুলে আন্তর্জাতিক সহানুভূতি আদায়ের পথ নিতে পারে।
এদিকে এনসিপির আহ্বানে শাহবাগ মোড়ে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে অবরোধে জামায়াত-শিবির, হেফাজতে ইসলাম, গণঅধিকার পরিষদ, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ ছাত্র-জনতা অংশগ্রহণ করেছে।
এই পরিস্থিতিতে, বিএনপির সামনে দুটি পথ খোলা রয়েছে: একদিকে, তারা এনসিপির আহ্বানে সাড়া দিয়ে আন্দোলনে যোগ দিতে পারে; অন্যদিকে, তারা তাদের নিজস্ব কৌশল অবলম্বন করে নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হতে পারে। কোন পথ তারা বেছে নেবে, তা সময়ই বলে দেবে।
ভিওডি বাংলা/ এমএইচ
স্থানীয় নির্বাচন দিয়ে প্রশাসনের ফিটনেস যাচাই করা উচিত - আবু হানিফ
নিজস্ব প্রতিবেদক:
গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল …

গাজীপুর জেলা বিএনপির ৮টি ইউনিটে উপজেলা ও পৌর কমিটি ঘোষণা
নিজস্ব প্রতিবেদক
গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর উপজেলা, কালিয়াকৈর পৌর সভা, শ্রীপুর …

ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের মহানায়ক তারেক রহমান: ডা. রফিক
নিজস্ব প্রতিবেদক
বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম বলেছেন, বেগম …
