ঘুমন্ত শিশুর বুকে ছুরি চালিয়ে আত্মগোপনে বাবা

সাহিত্যের ভাষায় শনিবার রাতটা ছিল অন্য সব রাতের মতোই শান্ত, নিশ্চুপ। মা-বাবার মাঝখানে নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছিল তিন বছরের ছোট্ট তোহা খাতুন। সে জানতো না, এই ঘুমটাই হবে তার সারাজীবনের ঘুম। যে বাবা একদিন কোলে তুলে আদর করতেন, সেই বাবার হাতের ছুরিই কেটে এফোঁর-ওফোঁর করে দিলো তোহার বুক- নিভিয়ে দিলো এক নিষ্পাপ প্রাণের প্রদীপ। শনিবার (২ নভেম্বর) রাত ১০ টার দিকে টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার কাইতকাই গ্রামে ঘটে এই হৃদয়বিদারক ঘটনা। নিহত তোহা ওই গ্রামের মুক্তার আলী ও রুমি আক্তার দম্পতির আদরের কন্যা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মুক্তার আলী প্রায় এক বছর ধরে মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় ছিলেন। পরিবার থেকে তাঁকে চিকিৎসার জন্য নানা জায়গায় নিয়ে গেলেও খুব একটা উন্নতি হয়নি। ঘটনার রাতে হঠাৎ তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। নিঃশব্দ ঘরের মধ্যে ঘুমন্ত মেয়ের গায়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে ছুরি দিয়ে দুই জায়গায় স্বজোরে আঘাত করেন। একটি বুকে, আরেকটি পেটে। মুহূর্তেই রক্তে ভেসে যায় ছোট্ট তোহার দেহ। তার ক্ষতবিক্ষত শরীর থেকে বেরিয়ে আসে নাড়িভুঁঁড়ি। এ এক বিভীষিকাময় দৃশ্য- যা দেখে মূর্ছা যান মা রুমি আক্তার। চিৎকার শুনে প্রতিবেশিরা ছুটে এসে শিশুটিকে উদ্ধার করে ঘাটাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান- কিন্তু কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান তোহা আর বেঁচে নেই। এদিকে শান্ত কাইতকাই গ্রামের মানুষ এখনো বিশ্বাস করতে পারছে না, একজন বাবা এমন নিষ্ঠুর হতে পারেন!
তোহার নিথর দেহ ঘিরে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন মা রুমি আক্তার, আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশিরা। কেউ কেউ বলছেন, তোহার মুখের হাসিটা এখনো চোখে ভাসে। কেউ আবার নিঃশব্দে তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে, যেন প্রশ্ন ছুঁঁড়ে দিচ্ছে- একজন পিতা কীভাবে নিজের সন্তানের ঘাতক হতে পারে?
ঘটনার পরই ঘাতক বাবা মুক্তার আলী পালিয়ে আত্মগোপনে চলে যায়। খবর পেয়ে ঘাটাইল থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে এবং পলাতক বাবাকে গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চালাচ্ছে।
ঘাটাইল থানার অফিসার ইনচাজ(তদন্ত) সজল খান জানান, ঘটনাটি সত্যিই অত্যন্ত হৃদয়বিদারক। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, মুক্তার আলী মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় শিশুটিকে হত্যা করেছে। তাকে আটকের চেষ্টা চলছে।
ভিওডি বাংলা/ এমএইচ







