• ঢাকা বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩ পৌষ ১৪৩১

বড় চুরি করে কেউ পার পাবে না : ড. মুশতাক হুসেন

নিজস্ব প্রতিবেদক    ২ নভেম্বর ২০২৫, ০৩:৪৬ পি.এম.
দুদক সংস্কার কমিশনের সদস্য ড. মুশতাক হুসেন খান। ছবি: ভিওডি বাংলা

সোয়াস ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনে অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এবং দুদক সংস্কার কমিশনের সদস্য ড. মুশতাক হুসেন খান বলেছেন, “বড় বড় অলিগার্ক কোথায় কোথায় হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করছে তা প্রমাণসহ আমাদের দেখানো উচিত ছিল। বড় বড় অলিগার্কদের সম্পদ ক্রোক হয়নি। তাদের টাকা পুনরুদ্ধার করার প্রয়োজন ছিল।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা বিদ্যুৎ খাতের চুরি নিয়ে কাজ করছি। আশা করি প্রমাণসহ জাতির সামনে উপস্থাপন করতে পারবো। বড় চুরি করে কেউ পার পাবে না। কোনো অলিগার্ককে ক্ষমা করা যারা যাবে না।”

রোববার (০২ নভেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) শফিকুল কবির মিলনায়তনে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
আলোচনা সভাটি যৌথভাবে আয়োজন করেছে আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি), বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন এবং ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশ (আপ বাংলাদেশ)।

আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেছেন বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার সভাপতি এড. হাসনাত কাইয়ূম।

ড. মুশতাক হুসেন খান বলেন, “আমাদের আস্থা, নৈতিকতা, ক্ষমতা ও নতুন বন্দোবস্ত আছে।  অভ্যুত্থানের পর সবাই সমাজের আমুল পরিবর্তন করতে চেয়েছিল। কিন্তু এই পরিবর্তন নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত সমঝোতার মাধ্যমে হবে না। একটা কামরায় বসে সবাই নিয়ে কোনো কিছুতে স্বাক্ষর করে হবে না। গনঅভ্যুত্থানে পর আমাদের বাংলাদেশের মৌলিক সমস্যা কি কি তা বিন্যাস করতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, “আস্থা ও ক্ষমতা সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়। আমাদের দেশে উপর থেকে নিচ পর্যন্ত কারো ওপর আস্থা নেই। ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর আমরা সবাইকে খুব তাড়াতাড়ি ক্ষমা করে দিয়েছি।  আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ এদের কোনো শাস্তি হয়নি। তাদের শাস্তি হওয়ার দরকার ছিল। আজকে আমরা কাউকে বিশ্বাস করতে পারছি না। আমরা চাই— সত্যিকারে অর্থে নতুন বন্দোবস্ত করতে হবে। যারা ভয়ে বিক্রি হবে বা অনাস্থার কারণে বিক্রি হয়ে যায়, তাদের আমাদের কোন সম্পর্ক থাকবে না এবং তাদেরকে ক্ষমা করা যাবে না। আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যারা জড়িত তাদেরকে চিহ্নিত করতে হবে। নির্বাচন হোক বা না হোক, তবে যারা দেশের টাকা পাচার করেছে, সেসমস্ত অলিগার্কদের শাস্তি দিতে হবে।”

“বাংলাদেশে পরিবর্তনের সুযোগ এসেছে এবং এই পরিবর্তনটি করতে হবে। অলিগার্ক শাসিত সমাজ আমরা চাই না।”

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মুশতাক হুসেন  বলেন, “নির্বাচন দলগুলোকে এমনভাবে শৃঙ্খলাবদ্ধ হতে হবে এবং জনগণের আস্থা অর্জনের জন্য এমন কিছু কথা বলতে হবে, যেগুলো জনগণ চিনতে চায়।”

এসময় হাসনাত কাইয়ূম বলেন, “আজকে একটা জটিল সময়ের মধ্যে আছি। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ আসলে তেমন স্বস্তি পায়নি। এরপর ২৪ এ যে বিজয় এসেছে, একবছর আলোচনা করার পর কোনো কিছুই হয়নি। ২৪ এর বিজয় এখনো ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে গেছে। যাদেরকে আমরা পরাজিত করেছি, তারা যেকোনো সময় উল্টো কামড় দিতে পারে।”

আগামীর বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহবান জানান তিনি।

এসময় জাতীয় ঐকমত্যে কমিশনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সালাহউদ্দিন আহমদের বক্তব্য প্রসঙ্গ টেনে আমার বাংলাদেশ পার্টি'র এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, “কমিশনে কথায় কথায় তিনি সংবিধান, আর্টিকেল ও অনুচ্ছেদ টেনে কথা বলতেন। কিন্তু তাকে যখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গুম করে সীমান্ত দিয়ে ভারতের শিলংয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হলো, এটা কত নম্বর আর্টিকেলে লেখা ছিল? কোন আর্টিকেল অনুসারে আপনাকে এই বিনা ভিসায় বিনা ভাড়ায় পরিভ্রমণ করানো হয়েছে। সেটাও যদি আপনি কখনো কখনো বলতেন তাহলে ভালো হতো।”

তিনি বলেন, “গত ১৫ বছর শেখ হাসিনা প্রতিনিয়ত রাষ্ট্র ও সংবিধানকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে দুমড়ে-মুচড়ে হত্যা করেছিল। রাষ্ট্রকে এমন এক জায়গায় নিয়ে গিয়েছিলেন যার জন্য আমাদের গণঅভ্যুত্থানের আশ্রয় নিতে হয়েছিল। এখন সংকটটা কোথায়? দল যদি সংস্কার না হয় রাজনীতি কিভাবে সংস্কার হবে?”

মঞ্জু আরও বলেন, “রাষ্ট্র এখন তিনটি সংকটে ঘনিভূত হয়েছে। প্রথমত— গণভোট আগে না পরে বা একসঙ্গে। দ্বিতীয়ত— নোট অব ডিসেন্টের কি হবে? তৃতীয়ত— আগামী দিনের নির্বাচন কিসের নির্বাচন? এই অন্তবর্তী সরকার তার কোনো প্রিন্সিপাল পজিশন নেই। বিএনপির চাপে তারা কিছুক্ষন ডানে ছুটেন আবার জামায়াতের চাপে তারা কিছুক্ষণ বামে ছুটেন। এনসিপির চাপে তারা মাথার উপর থেকেও একটা চেষ্টা করেন।”

সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “আপনারদের কাছে আমাদের অনুরোধ হচ্ছে—  আপনারা আপনাদের অবস্থান সঠিক করেন। আপনারাও যদি রাষ্ট্রের মালিক সাজেন তাহলে হবে না। আপনাদেরকে মানুষের দুঃখ দুর্দশার মানুষের প্রয়োজনের কথাগুলো শুনতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, সরকারকে বলবো— কয়েকটা রাজনৈতিক দলের মন জুগিয়ে চলার রাজনীতির চিন্তা-নীতি বাদ দেন। না হলে আপনারা যে একটা সুযোগ পেয়েছিলেন সেই সুযোগ হাতছাড়া করার দায় আপনারা চিরস্থায়ীভাবে বাংলাদেশের মানুষের কাছে দায়ী থাকবেন। এই দায় থেকে আমাদের শহীদদের রক্ত আহতদের রক্ত আপনাদেরকে কখনো মুক্তি দিবে না।”

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন বলেন, “দেশে আইনের শাসন না থাকলে, সেখানে আস্থার শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।”

তিনি আরও বলেন, “ফ্যাসিবাদকে আমরা তাড়ালেও, ফ্যাসিবাদী বন্দোবস্ত এখনো রয়ে গেছে।” 

ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশ'র (আপ বাংলাদেশ) আহবায়ক আলী আহসান জুনায়েদ বলেন, “রাজনৈতিক দলগুলো শুধু ক্ষমতার কথা ভেবেছে। জনগণের কথা ভাবছে না। সংস্কারের সঙ্গে জনগণের কোনো সম্পর্ক নেই। জনগণ এমন বাংলাদেশ চায়— যেখানে শেখ হাসিনার মতো কেউ আর যাতে ফ্যাসিবাদ কায়েম করতে না পারে। গণভোট প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে 'হ্যা' বা 'না' বলছে। জনগণ শান্তি রাষ্ট্র চায়, নিরাপত্তা রাষ্ট্র চায়। আপ বাংলাদেশ এমন রাষ্ট্র চায়— জনগণের কাছে দেশের মালিকানা থাকবে।”

এবি পার্টি'র সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান প্রফেসর ডা. মেজর (অব.) আব্দুল ওহাব মিনার বলেন, “আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো আস্থা রাখতে পারছে না। সেজন্য তাদেরকে ভোট চুরি করতে হচ্ছে। দীর্ঘদিনের বন্ধু বা মিত্র শত্রুতে পরিণত হচ্ছে।”

বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ হাসিব উদ্দিন হোসেন বলেন, “বাংলাদেশের রাষ্ট্র এই মূহুর্তে খুবই দূর্বল। এ কারণেই দেশে অস্থিতিশীলতা তৈরি হচ্ছে। তবে, এই মূহুর্তে দেশে একটা নির্বাচন হওয়া খুব জরুরি।” 

আপ বাংলাদেশ'র সদস্য সচিব আরেফিন মুহাম্মদ হিজবুল্লাহ বলেন, “কাঠামোগত ফ্যাসিবাদকে এখনো বাদ দেয়া হয়নি। রাজনৈতিক দলগুলো সেটা করেনি।”

তিনি আরও বলেন, “আমাদের মধ্যে ঐক্যের যে সম্ভাবনা ছিল, কিন্তু সেটা হয়নি। জনগণ এখন হতাশার মধ্যে আছে।”

আপ বাংলাদেশ'র মুখপাত্র শাহরিন সুলতানা ইরা'র সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দিদার হোসেন ভূঁইয়া, এবি পার্টি'র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার জোবায়ের আহমেদ ভূঁইয়া, আপ বাংলাদেশ'র প্রধান সংগঠক নাঈম আহমাদ প্রমুখ।

ভিওডি বাংলা/ এমএইচ

  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
আরপিও সংশোধন আইন মন্ত্রণালয়ের ওপর ছেড়ে দিলো ইসি
আরপিও সংশোধন আইন মন্ত্রণালয়ের ওপর ছেড়ে দিলো ইসি
দেশে মোট ভোটার সংখ্যা কত, জানালেন ইসি
দেশে মোট ভোটার সংখ্যা কত, জানালেন ইসি
ভুয়া তথ্যঝুঁকি নিয়ে ডিজিটালি রাইটের গবেষণায় সতর্কবার্তা
ভুয়া তথ্যঝুঁকি নিয়ে ডিজিটালি রাইটের গবেষণায় সতর্কবার্তা