ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সদস্যদের যে বার্তা দিলেন মির্জা ফখরুল

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে সকল জাতিগোষ্ঠিকে নিয়ে ‘রেইবো নেশন’(রংধনু জাতি) গড়ে তুলবে বলে জানালেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শুক্রবার বিকালে ঢাকায় ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠি ‘গারো’ সম্প্রদায়ের এক অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব দলের এই অবস্থানের কথা জানান দেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেব ২০২২ সালে যে ৩১ দফা ঘোষণা দিয়ে্ছেন সেখানে তিনি খুব পরিষ্কার করে বলেছেন যে, আমরা একটা রেইনবো নেশন তৈরি করব। অর্থাৎ যে নেশনে সব সম্প্রদায়গুলো অন্তর্ভুক্ত হয়ে সেখানে তারা তাদের অবদান রাখতে সক্ষম হবে। আগামীতে বিএনপির সরকারে আসলে অবশ্যই অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে আপনাদের সমস্যাগুলো বিবেচনা করা হবে।’
গারো সম্প্রদায়ের দাবি-দাওয়ার প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ঘোষিত ভিশন-২০৩০ কর্মসূচিতে সমতলের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সংস্কৃতি-ঐতিহ্য রক্ষা করা এবং তাদের সমস্যার সমাধানের পৃথক অধিদফতর গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন। বিএনপি আগামীতে সরকারে আসলে ঢাকায় ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর পৃথক সাংস্কৃতিক একাডেমী গঠন করা হবে এবং সরকারিভাবে গারোদের ‘ওয়ানগালা উৎসব পালনের বিষয়ে সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করা হবে।’
রাজধানীর বনানী বিদ্যা নিকেত স্কুল ও কলেজ মাঠে ঢাকায় বসবাসরত ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠি ‘গারো’ সম্প্রদায়ের সংগঠন ‘ঢাকা ওয়ানগালা কমিটির উদ্যোগে ‘ঢাকা ওয়ানগালা উৎসব-২০২৫’ উপলক্ষ্যে এই আলোচনা সভা হয়। অনুষ্ঠানে গারো সম্প্রদায়ের সদস্যরা না-গান পরিবেশ করে।
‘সকল জাতিগোষ্ঠির স্বীকৃতি দিতে হবে’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের মূল যে ধারা সেই ধারার সঙ্গে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠিকে এক হওয়ার চেষ্টা করতে হবে। মন-মানসিকতাকে বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে আপনাদেরকে উঠে দাঁড়াতে হবে। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সেই জন্যেই বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদকে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। এর একটাই উদ্দেশ্য যে, শুধু বাঙালি নয়, বাংলাদেশের তাদেরকে একটা স্বীকৃতি দেওয়া যে আর যেগুলো আদিবাসী আছেন জাতিগোষ্ঠী আছেন তাদেরকেও সেই স্বীকৃতি তিনি দিয়েছেন… তখন থেকেই আমরা গারো সম্প্রদায়কে স্বীকৃতি দিয়েছি, তাদের কৃষ্টি সংস্কৃতিকে টিকিয়ে রাখার জন্য এবং সবচেয়ে বেশি যেটা দরকার তাদের আর্থিক অবস্থার উন্নয়ন দরকার।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপির দায়িত্ব হচ্ছে যে সকল সম্প্রদায়গুলোকে মূল সম্প্রদায়ের সঙ্গে কিছুটা এক করা, সেই সঙ্গে তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা যেন উন্নত হয় তার ব্যবস্থা করা। একই সঙ্গে তাদের কৃষ্টি-সংস্কৃতিকে ধরে রাখা চেষ্টা করা…এটা হচ্ছে একটা পর কাজ বলে আমি মনে করি।’
‘আমি আপনাদের পক্ষে কথা বলব’
বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি(বিজেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ (যিনি আসন্ন নির্বাচনে ঢাকা-১৭ আসনের প্রার্থী হবেন) বলেন, ‘আপনারা (গারো সম্প্রদায়) নিজেদেরকে দূর্বল মনে করবেন না। আপনারা সংখ্যায় কম হতে পারেন।তবে আমরা আপনাদের ভাই, আমরা বাংলাদেশী, আমরা আপনাদের পাশের মানুষ। আপনারা যখন বললেন, আপনাদের মধ্য থেকে সংসদ কথা বলতে প্রতিনিধি লাগবে। কেনো আপনাদের কি আমাদের বিশ্বাস হয় না। আমাদের ওপরেও বিশ্বাস রাখেন ইনশাল্লাহ। আপনাদের যেকোনো অসুবিধা, যেকোনো দাবি আমি আজকে বলে যাচ্ছি বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে আপনারা আমার কাছে বলে যাবেন, আমাদের দিয়ে যাবেন … আমি এতোটুকু আপনাদের বলতে পারি আপনাদের প্রতিনিধি সংসদে যা বলবে ইনশাল্লাহ কোনো অংশে আপনাদের পক্ষে কম দাঁড়াবো না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা জানি, কোনভাবেও আর আগামীতে জাতি বিভক্ত প্রক্রিয়ার যে ট্র্যাক রাজনীতিবিদরা করে তার মধ্যে না পড়ি। রাজনীতি বস্তুনিষ্ঠ স্বপ্ন দেখিয়ে মানুষকে ইমপ্রেস করা করা, কনভিন্স করা খুবই কঠিন ব্যাপার। এর চেয়ে সবচেয়ে সহজ হলো জাতি বিভক্ত প্রক্রিয়া করা। যেটা গতানুকগতিকভাবে আমরা দেখে এসেছি যে বড় বড় রাজনৈতিক দল বা এনারা এগুলি করে আসছে। বিশেষ করে গত ১৭ বছর ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ রিজিম যেটা করে আসছে। এই ট্র্যাপে জানি আমরা আগামীতে না পড়ি। আমরা যেন রাজনীতি করি গণতান্ত্রিক পন্থায়। আপনারা আমাদের কোন মাইনরিটি না, আপনারা অবশ্যই আপনারা গারো সম্প্রদায়। আমি মনে করি প্রত্যেকটা বাংলাদেশের নাগরিক যেমন আমাদের কাছে, তরুণ প্রজন্মের কাছে, সামনে যারা ইনশআল্লাহ আগামীতে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেবে এবং বিএনপির যারা নেতৃত্ব আছেন বিশেষ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেব থেকে আরম্ভ করে যারা আছেন যে নিউ টিম আসছেন যারা ওল্ড টিম আছেন আমি বলব, যে এক্সপেরিয়েন্স টিম আছেন আমরা সবাই এটাই বিশ্বাস করি যে সবাইকে মিলে আমরা দেশ গড়ি।’
সঞ্চয় নাফাক এর সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিবে আলোচনা সভায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, জাতীয়তাবাদী ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠি দলের সভাপতি মৃগেন হাগিদক, ক্রিস্টিয়ান সার্ভিস সোসাইটির পরিচালক বাপন মানকিন, বিরিশিরি কালচারাল একাডেমির পরিচালক পরাগ রিটসিল, আয়োজক কমিটির শুভজিট স্যানগমা নাকমা প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।
ভিওডি বাংলা/ এমএইচ





