ব্যতিক্রম এক বিয়ের সাক্ষী হলো হাসপাতালের চার দেয়াল


কন্যার বাপ সবুর করিতে পারিতেন, কিন্তু বরের বাপ সবুর করিতে চাহিলেন না। তিনি দেখিলেন , মেয়েটির বিবাহের বয়স পার হইয়া গেছে , কিন্তু আর কিছুদিন গেলে সেটাকে ভদ্র বা অভদ্র কোনো রকমে চাপা দিবার সময়টাও পার হইয়া যাইবে।
তবে প্রবাদ আছে, ‘মিয়া-বিবি রাজি, কেয়া ক্যারেগা কাজী’- পরিস্থিতি যখন এমন- তখন দুই পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত এলো- চলো, হাসপাতালে ‘শুভলগ্নেই’ বিয়ে হবে। দুই পক্ষের এমন টানটান উত্তেজনায় হৃদয় ধকপক করতে থাকা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও বললো, চলো, লেটস গো..।
মানিকগঞ্জে ব্যতিক্রম এক বিয়ের সাক্ষী হলো হাসপাতালের চার দেয়াল। শহরের আফরোজা বেগম জেনারেল হাসপাতালে একটি খালি জায়গায় ধুমধামে উদযাপিত হলো অভিজিৎ-অমৃতার বিয়ে। হিন্দু রীতি অনুযায়ী সিঁদুরদানসহ বিয়ের সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে হলো হাসপাতালেই। সবচেয়ে আকর্ষণীয় ছিলো সাতপাকে বাঁধা পাড়ার উদযাপনটি। বর সেহেতু আহত হয়ে বেডে, তাই সেই বেডে শুয়েই সেরে ফেললেন সাতপাকের আনুষ্ঠানিকতা।
বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) রাত ৯টার দিকে হাসপাতালের অস্থায়ীভাবে খালি রাখা একটি অংশে এই বিশেষ বিয়ের আয়োজন করা হয়।
বরপক্ষ জানায়, মানিকগঞ্জ শহরের চাঁন মিয়া লেনের বাসিন্দা অরবিন্দ সাহার বড় ছেলে অভিজিৎ সাহার বিয়ের তারিখ আগে থেকেই ঠিক ছিলো। কিন্তু নির্ধারিত দিনটির আগেই ঘটে যায় অপ্রত্যাশিত দুর্ঘটনা। ঢাকা থেকে ফেরার পথে ধামরাইয়ে দুর্ঘটনায় মারাত্মক আহত হন তিনি। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শারীরিক অসুবিধা সত্ত্বেও দুই পরিবারের সম্মতি ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অনুমতিতে বিশেষ কক্ষে সম্পন্ন হয় এ ব্যতিক্রমী বিয়ের আয়োজন।
বর আনন্দ সাহা বলেন, কিছুদিন আগে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছি। এখন আগের চেয়ে অনেকটা সুস্থ। দুর্ঘটনার পূর্বে বিয়ের দিন ধার্য ছিল। ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী বিয়ের সম্পন্ন হয়েছে। আমি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের প্রতি কৃতজ্ঞ।
ঘিওর উপজেলার বানিয়াজুরী গ্রামের বাসিন্দা কনে অমৃতা সরকার বলেন, পারিবারিকভাবেই বিয়ের আয়োজন করা হয়েছে। স্বামীর সুস্থতা ও তাদের দাম্পত্য জীবনের জন্য সকলের কাছে আশীর্বাদ চেয়েছেন তিনি।
হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসার ডা. সিরাজুল ইসলাম জানান, মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় তার এক হাত ও পায়ে গুরুতর আঘাত লাগে। সেদিনই তার বিয়ের দিন ছিলো। পরিবার আমাদের বিষয়টি জানালে আমরা গুরুত্ব সহকারে কনসালটেন্টদের সঙ্গে আলোচনা করি। রোগীর অবস্থা আগের তুলনায় স্থিতিশীল মনে হওয়ায় হাসপাতালের অব্যবহৃত অংশে অনুষ্ঠানটি সম্পন্ন করার অনুমতি দেওয়া হয়। ইতিমধ্যে ব্যতিক্রমী এই বিয়ের আয়োজনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
ভিওডি বাংলা/ এমএইচ