কেন্দুয়ায় জন্মনিবন্ধনে ভোগান্তি, বাল্যবিবাহের শাস্তি পাচ্ছে শিশু


নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলায় নতুন অনলাইন সফটওয়্যার চালুর পর থেকে জন্মনিবন্ধনে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন অনেক অভিভাবক। বাবা-মায়ের বয়স আইনসিদ্ধ না হলে শিশুর জন্মনিবন্ধন আটকে যাচ্ছে। ফলে স্কুলে ভর্তি, স্বাস্থ্যসেবা ও সরকারি নানা সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে নিরীহ শিশুরা।
সরকার বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, শিশুর জন্মনিবন্ধনের সময় পিতার বয়স ২২ বছরের কম এবং মাতার বয়স ১৯ বছরের কম হলে জন্মনিবন্ধন করা যাবে না।
এ নিয়ে সাম্প্রতিক কেন্দুয়া উপজেলার কান্দিউড়া ইউনিয়ন পরিষদের জন্ম নিবন্ধন উদ্যোক্তা বিপুল দে তাঁর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুক পোস্টে উল্লেখ করেন, "সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি। সরকার বাল্য বিবাহ প্রতিরোধ ও অনুৎসাহিত করণের জন্য আরেকটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছেন।
বাচ্চার জন্ম নিবন্ধনের সময় পিতার বয়স ২২বছর ও মাতার বয়স ১৯ বছরের কম হলে বাচ্চার নিবন্ধন করা যাবেনা। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অনলাইন সার্ভারে এটা আটকে যাবে। এসব ঝামেলা এড়াতে ২২বছর ও ১৮ বছরের পূর্বে বিবাহকে না বলি"।
কান্দিউড়া ইউনিয়ন পরিষদের জন্ম নিবন্ধন উদ্যোক্তা বিপুল দে তার ফেইসবুক পোস্টে সুত্র ধরে অনুসন্ধানে জানা যায় কেন্দুয়া পৌরসভা এবং উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, নতুন নিয়ম কার্যকর হওয়ার পর আরিফা (৬) ও সৌরভ সূত্রধর (৭ মাস) সহ একাধিক নবজাতকের বাবা-মায়ের বাল্যবিবাহের কারণে জন্মনিবন্ধন আটকে গেছে। পরিবারগুলো ক্ষোভ প্রকাশ করলেও জন্মনিবন্ধন আইনের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই বলে জানা যায়।
স্থানীয় সচেতন মহলের মতে, এ ভোগান্তির জন্য মূলত দায়ী কাজী ও অভিভাবকেরা। আইন জানা সত্ত্বেও কাজীরা বয়স যাচাই না করে বিয়ে সম্পন্ন করেছেন এবং অভিভাবকেরা সামাজিক চাপ ও অজ্ঞতার কারণে নাবালক সন্তানের বিয়ে দিয়েছেন। ফলে জন্মের পর শিশু জন্মনিবন্ধন না পেয়ে নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
কেন্দুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমদাদুল হক তালুকদার বলেন, জন্মনিবন্ধন সফটওয়্যার রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয় থেকে পরিচালিত হয়। অভিযোগগুলো উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। পাশাপাশি বাল্যবিবাহে জড়িত অভিভাবক ও নিকাহ রেজিস্ট্রার উভয়েই সমানভাবে দায়ী হবেন। এতে শিশুর জন্মনিবন্ধন বন্ধ হওয়ার পাশাপাশি সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে অর্থদণ্ড ও কারাদণ্ডও হতে পারে।
কেন্দুয়া রিপোর্টার্স ক্লাবের সাবেক সভাপতি আবুল কাশেম আকন্দ বলেন, এই নিয়ম কার্যকর থাকলে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে কাজী ও অভিভাবক বাধ্য হবেন দায়িত্বশীল হতে। এতে শিশুদের জন্মনিবন্ধন সুরক্ষিত হবে এবং দীর্ঘমেয়াদে নাগরিক অধিকার রক্ষায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
ভিওডি বাংলা/ এমএইচ