নানা সংকটে বরিশাল বিভাগের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেগুলো


নানা সংকটে জর্জরিত বরিশাল বিভাগের জেলা-উপজেলায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেগুলো।বিভাগের ৬ জেলায় ৪১টি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স অধিকাংশতেই রোগ নির্নণ মেশিনের বেহাল দশা। কোথাও বছরের পর বছর অকেজ হয়ে পরে আছে ভারি মেশিনারিজ। আবারও কোথাও লোকবল সংকট। কাঙ্ক্ষিত সেবা বঞ্চিত হচ্ছেন দক্ষিনাঞ্চলের প্রায় ১ কোটি মানুষ।বাধ্য হয়ে প্রাইভেট ক্লিনিকে সেবা নিতে হচ্ছে। গুনতে হচ্ছে কয়েকগুন বেশি টাকা।
বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেটিতে এনালক এক্সরে মেশিন আছে, কিন্তু অকেজো। আলতাসনোগ্রাম মেশিনহস অধিকাংশ পরীক্ষার যন্ত্রংশা ১ বছরেরও বেশি সময় ধরে নষ্ট। বাড়তি টাকায় বাহির থেকে রোগীদের পরীক্ষা করতে হয়। চরম বিড়াম্বনায় পড়তে হয় চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের । বাধ্য হয়ে প্রাইভেট ল্যাবে পরীক্ষা করতে হচ্ছে।
চিকিৎসা নিতে আসা কলেজ ইতি শিক্ষার্থী বলেন , ডাক্তার আলতাসনোগ্রাম পরীক্ষা দিছেন। কিন্তু আলতাসনোগ্রাম স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করানো হচ্ছে না। তাই প্রাইভেট ল্যাবে কয়েকগুন বেশি টাকায় পরীক্ষা করিয়েছি।
গৃহীনি রহিমা বেগম বলেন, জ্বরের জন্য ডাক্তার ২ টা পরীক্ষা দিছে। তার একটাও নাকি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করানো যাবে নন। কি আর করার। কষ্ট হলেও প্রাইভেটে ক্লিনিকেই পরীক্ষা করাতে হবে।
এ বিষয়ে বাকেরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য এবং পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সুমী আক্তার পরীক্ষার যন্ত্রাংশের অকেজোর কথা স্বীকার করে বলেন, কয়েকটা জিনিসের অভাব খুব বেশি উপলব্ধি করছি। তার মধ্যে ডিজিটাল এক্সরে মেশিন, আলতাসনোগ্রাম মেশিন এবং রক্ত পরীক্ষা জন্য কাউন্টার মেশিন।
এদিকে পিরোজপুর সদরের জেলা হাসপাতালটির মাসের পর মাস ধরে পরে আছে এক্সরে মেশিন নষ্ট। এখানে হয়না ইসিজিও। অভিযোগ আছে, জেলা ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোর পরীক্ষা-নিরীক্ষার যন্ত্রপাতি নানা অজুহাতে অকেজো রেখে রোগী পাঠানো হয় বেসরকারি ডায়গনিষ্টক সেন্টারগুলোতে। হাতিয়ে নেয়া হয় মোটা অঙ্কের টাকা।
রোগী স্বজন তোফাজ্জেল মীর অভিযোগ করে বলেন , স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোর পরীক্ষা-নিরীক্ষার যন্ত্রপাতি গুলো নানা অযুহাতে অকেজো করে রেখে প্রাইভেট ক্লিনিকে টেস্ট করাতে পাঠান এবং সেখানে থেকে মোটা অংকের কমিশন হাতিয়ে নেন।
তবে পিরোজপুর সিভিল সার্জন ডা. মো. মতিউর রহমান বলেন, অধিকাংশ পরীক্ষা করতে পারছি। ২-১টি পরীক্ষা করতে হয়তো সমস্যা থাকতে পারে। সেটাও পরর্তীতে ব্যবস্থা করার জন্য চেষ্টা করবো।
অপরদিকে পটুয়াখালী আড়াইশো শয্যার হাসপাতালে বছর পর বছর বিকল হয়ে পড়ে আছে নানা যন্ত্রপাতি। ৫টি এক্সরে মেশিনের ৩টি নষ্ট। ২ টি আলট্রাসনোগ্রাফ মেশিনের অচল ১টি। চিকিৎসা সেবা নিেতে আসা রোগীদের টেস্ট করাতে প্রাইভেট ডায়গনস্টিকে যেতে হচ্ছে। যার কারণে রোগীদের গুনতে হয় বাড়তি টাকা।
রাঙ্গাবালী উপজেলা থেকে জেলা শহরে একটু উন্নত চিকিৎসা নিতে আসা ইউনুস মোল্লা জানান ডাক্তার তাকে ৪ টি টেস্ট দেয় । হাসপাতালের যন্ত্রপাতি বিকল থাকায় যার সবকটি প্রাইভেট ডায়গনস্টি থেকে করতে হবে। কিন্তু তার কাছে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় হতাশা হয়েই ফিরে যাচ্ছেন বাড়িতে।
পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তত্ত্বাবধায় দিলরুবা ইয়াসমিন লিজা বলেন, আলতাসনোগ্রামের দুটি মেশিনের মধ্যে একটি অকেজো আছে। নষ্ট মেশিনটিও মেরামতের জন্য চিঠি দিয়েছি।
উল্লেখ্য, স্বাস্থ্য সেবায় অনিয়ম দুর্নীতির প্রতিবাদ এবং তা সংস্কারে ৩ দফা দাবিতে টানা ২১ দিন ধরে ছাত্র-জনতার ব্যানারে আন্দোলন চালাচ্ছে বরিশালের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।
বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় ৪১টি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এখানকার ৩৬টি এক্সরে মেশিনের মধ্যে ২৭ টি সচল। আলট্রাসনোগ্রাফি মেশিনের ৪১টির ১৫টি-ই অচল। এর বাইরেও আরও অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষাই হয় না ভারি মেশিনারিজ অকেজো থাকায়।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা মো আবু জাফর বলেন, দেশের বিভিন্ন হাসপাতালেই ভারি মেশিনারিজের অভাব আছে। সময়সাপেক্ষ উল্লেখ করে কেনাকাটার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান অধিদফতরের মহাপরিচালক।
ভিওডি বাংলা/ এমএইচ