• ঢাকা বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩ পৌষ ১৪৩১

রাজশাহীর ছয়টি আসন, বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী অর্ধশতাধিক

রাজশাহী ব্যুরো    ২৫ আগস্ট ২০২৫, ০১:৩৯ পি.এম.
ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহীর ছয়টি আসনেই বিভিন্ন দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা নেমে পড়েছেন মাঠে। দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা নানাভাবে নির্বাচনি এলাকায় নিজেদের উপস্থিতি জানান দিচ্ছেন। মনোনয়নপ্রত্যাশীরা রাজনৈতিক নানা কর্মসূচিতে যোগদানের পাশাপাশি অংশ নিচ্ছেন সামাজিক কর্মকা-ে। অতিথি হচ্ছেন ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিকসহ নানা অনুষ্ঠানে। চাইছেন নিজেদের পক্ষে এলাকার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সমর্থন। দলীয় নেতাকর্মী ছাড়াও সাধারণ মানুষের সঙ্গে বিভিন্নভাবে বাড়িয়েছেন যোগাযোগ। দোয়া শুভেচ্ছা ব্যানার-পোস্টার সাঁটিয়ে চাইছেন সবার নজরে আসতে।

রাজশাহীর ৯ উপজেলা নিয়ে গঠিত ছয়টি আসন। জেলার এই আসনে এবার মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন বিভিন্ন দলের প্রায় অর্ধশতাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী। প্রতিটি আসনে জামায়াতে ইসলামীর একক প্রার্থী মনোনয়ন দিলেও চরম বিপাকে আছে বিএনপি। তাদের প্রতিটি আসনেই মনোনয়নপ্রত্যাশী রয়েছেন হাফ ডজনেরও বেশি। যদিও ইতোমধ্যেই নিজেদের প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে জামায়াত। তারা দলীয় কর্মকা-ের পাশাপাশি পুরোদমে নির্বাচনি কার্যক্রমও চালাচ্ছেন।

আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে ভোট হবে- প্রধান উপদেষ্টার এ ঘোষণায় বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীরা নেতাকর্মীদের নিয়ে এখন নির্বাচনী মাঠ গোছাতে তৎপর। এর বাস্তব চিত্র দেখা গেছে রাজশাহীর বিভিন্ন সংসদীয় আসনে। কিন্তু বিএনপির প্রার্থী চূড়ান্ত না হওয়ায় মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতারা কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে আগে থেকেই শুরু করেছেন দেনদরবার আর তদবির।

অপরদিকে জাতীয় পার্টি, বাসদ, ভাসানী জনশক্তি পার্টিসহ, ইসলামি অন্য দলগুলো এখনো পুরোপুরি মাঠ গোছাতে না পারলেও মাঝেমধ্যে দেখা যায় দুয়েকটা প্রোগ্রামে। এ ছাড়া দেশের বর্তমানে সর্বোচ্চ আলোচিত নবগঠিত দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সব এলাকায় এখনও কমিটিই গঠন করতে পারেনি। তারপরও তারা নানা কর্মসূচির মাধ্যমে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিচ্ছে।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কোনো সাংগঠনিক বা দলীয় কোনো তৎপরতা রাজশাহীর কোনো নির্বাচনি এলাকায় না থাকায় দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছেন তৃণমূল পর্যায়ের কর্মী-সমর্থকরা। গত বছর ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর মামলা, হামলায় এলাকা ছাড়া প্রায় সব নেতা। এছাড়া কিছু নেতা গ্রেফতার হয়ে জেলহাজতে আছেন। আর অধিকাংশ নেতা কর্মী-সমর্থক নিজেদের বাঁচাতে বিভিন্ন দলের ছায়াতলে আশ্রয় নিয়েছে বলে বলা হচ্ছে। দলের এই দুর্দিন ও ভঙ্গুর অবস্থায় সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন তৃণমলের কর্মী-সমর্থকরা।
রাজশাহীর ৯ উপজেলা নিয়ে গঠিত ছয়টি আসনে এবার মাঠ চষে বেড়ানো বিভিন্ন দলের প্রায় অর্ধ শতাধিকের বেশি মনোনয়নপ্রত্যাশী নিয়ে বিস্তারিত।

রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী)

রাজশাহীর ছয় আসনের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে তানোর ও গোদাগাড়ী উপজেলা নিয়ে গঠিত রাজশাহী-১ আসন। এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৪০ হাজার ২১৮ জন। এই এলাকায় বিএনপির হাফ ডজনেরও বেশি মনোনয়নপ্রত্যাশী। তার মধ্যে আগাম নির্বাচনী তৎপরতা শুরু করেছেন সম্ভাব্য চার প্রার্থী। জামায়াতের একক প্রার্থীও জোর সাংগঠনিক তৎপরতার পাশাপাশি নেতাকর্মীরা সাংগঠনিক কৌশলের অংশ হিসেবে মসজিদ-মাদরাসা এবং বিভিন্ন বাজারে সমবেত হয়ে দোয়া মাহফিল করছেন। এ সময় তারা ইসলামি শাসন ব্যবস্থার নানা দিক তুলে ধরে বক্তব্য দিয়ে এলাকাবাসীর সমর্থন চাইছেন।
বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে অন্যতম বিএনপির স্থায়ী কমিটির সাবেক সদস্য ও সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী প্রয়াত ব্যারিস্টার আমিনুল হকের ছোট ভাই অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল শরিফ উদ্দিন। তিনি বর্তমানে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কমিটির সদস্য। সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার (২০০১-২০০৬) শাসন আমলে সামরিক সচিব ছিলেন তিনি। জেনারেল শরিফ এলাকায় ব্যাপক সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু করেছেন।

এ ছাড়া বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে মাঠে নেমেছেন বিশিষ্ট শিল্পপতি অ্যাডভোকেট সুলতানুল ইসলাম তারেক, রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাবেক বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার কে এম জুয়েল, সুপ্রিম কোর্ট জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও গোদাগাড়ী উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ব্যারিস্টার মাহফুজুর রহমান মিলন, জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি সাজেদুর রহমান মার্কনি, জিয়া পরিষদের রাজশাহী বিভাগীয় কমিটির সদস্য সচিব এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী মহাসচিব অধ্যক্ষ আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বিপ্লব। এ লক্ষ্যে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদার করেছেন। এ ছাড়া জেলা বাসদের (খালেকুজ্জামান) আহ্বায়ক আলফাজ হোসেন এই আসনে প্রার্থী হবেন বলে জানান। এই লক্ষ্যে দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে প্রচার চালাচ্ছেন।

অপরদিকে, একক প্রার্থী নিয়ে জোর প্রচার চালাচ্ছে জামায়াত। দলের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির অধ্যাপক মজিবুর রহমান এই আসনে ভোটের মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। তিনি ১৯৮৬ সালে একবার এ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরে আরও কয়েকটি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হলেও জয়ের মুখ দেখতে পাননি। তবে এবার তিনি বিজয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।

রাজশাহী-২ (সদর) আসন

রাজশাহী-২ (সদর) আসনটি রাজশাহী তথা দেশের অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনি আসন। রাজশাহী-২ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ১৮ হাজার ১৩৮ জন। স্বাধীনতার পর রাজশাহীর এই আসনটিতে নির্বাচনে তিনবার বিএনপি, দুবার জাতীয় পার্টি, তিনবার ওয়ার্কার্স পার্টি ও একবার স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়লাভ করেছে। ইতোমধ্যে এই আসনকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক উত্তাপ।

স্বাধীনতার পর বিগত ১৭ বছরসহ আওয়ামী লীগ বিভিন্ন মেয়াদে দেশ শাসন করলেও রাজশাহী-২ আসনটি কখনোই তারা জয়ী হতে পারেনি। গুরুত্বপূর্ণ এই আসনটিতে বরাবরই বিএনপির দুর্গ হিসেবে পরিচিত। এই আসনে জামায়াতে ইসলামীর সাংগঠনিক অবস্থানও খুব শক্তিশালী। তারপরও অতীতের কোনো নির্বাচনে তারা জিততে পারেনি। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীদের সাংগঠনিক তৎপরতা চোখে পড়ার মতো। আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তাদের নেতাকর্মীরা নগরীর থানা, ওয়ার্ড ও মহল্লা পর্যায়ে নিবিড় সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। এছাড়া ইসলামী আন্দোলনসহ কয়েকটি দলের বেশ কয়েকজন প্রার্থী মাঠে সরব আছেন।

এ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতার নাম আলোচনায় আছেন। তাদের মধ্যে শীর্ষে রয়েছেন দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু। মিনু একটানা তিন মেয়াদে ১৭ বছর রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র ছিলেন। ২০০১ সালে রাজশাহী-২ আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে রেকর্ডসংখ্যক ভোট পেয়ে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও যুগ্ম মহাসচিব ছিলেন বিভিন্ন মেয়াদে। এ আসনে আলোচনার শীর্ষে আছেন দলের কেন্দ্রীয় সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী। যদিও রিজভীর নিজ জেলা কুড়িগ্রাম। তারপরও রাজশাহীর রাজনীতিতে রয়েছে তার বিশেষ প্রভাব। এ ছাড়া আরও মনোনয়নপ্রত্যাশীর তালিকায় আছেন মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট এরশাদ আলী ঈশা।

অন্যদিকে, এ আসনে আনুষ্ঠানিকভাবে জামায়াতে ইসলামী এই গুরুত্বপূর্ণ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছেন ডা. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীরকে। বর্তমানে রাজশাহী মহানগর জামায়াতের নায়েব আমির হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে তিনি রাজশাহী মহানগর ছাত্রশিবিরের সভাপতি ও মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি ছিলেন। এ ছাড়া তিনি রাজশাহী ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্মরত আছেন। রাজশাহী ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ছিলেন ডা. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর। যদিও দেশের অন্যান্য আসনের প্রার্থীর নাম ঘোষণার ৪ মাস পর এ আসনের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়। প্রার্থীর নাম ঘোষণার পর জামায়াত দলটির সাংগঠনিক তৎপরতা ব্যাপকভাবে শুরু করেছে।

রাজশাহী-২ 

আসন থেকেও জাতীয় পার্টি তাদের প্রার্থী দেবেন বলে জানা গেছে। জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে না এলেও ভেতরে ভেতরে তৃণমূল পর্যায়ে দলীয়ভাবে কার্যক্রম শুরু করেছেন বলে দলীয় সূত্রে জানা যায়। অন্যদিকে, বাম গণতান্ত্রিক জোটের অন্যতম জোট সিপিবি থেকে রাগিব আহসান মুন্না প্রার্থী হবেন বলে জানা গেছে।

রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর)

জেলার অন্য আসনগুলোর মতো রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনেও নির্বাচনকেন্দ্রিক দলীয় ও সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদার করেছেন বিএনপি, জামায়াতসহ বিভিন্ন দলে সম্ভাব্য প্রার্থীরা। এই আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৫৮ হাজার ৬৬৩ জন। আসনটির সীমানা রাজশাহী মহানগরীর উপকণ্ঠ এবং নগরীর চারপাশে হওয়ায় সব দলের কাছেই অতি গুরুত্বপূর্ণ। এখানে রয়েছে বিএনপির আধিপত্য। এই আসনটি ২০০৮ সালের আগে মোহনপুর উপজেলা ছিল রাজশাহীর-৪ আসন বাগমারার সঙ্গে। আর পবা উপজেলা ছিল রাজশাহী-২ আসনের সঙ্গে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে পুনর্গঠিত এ আসনে প্রথম এমপি নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের মেরাজ উদ্দিন মোল্লা (প্রয়াত)। এরপর ২০১৪ ও ২০১৮ সালে একই দলের আয়েন উদ্দিন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সবশেষ ২০২৪ সালের নির্বাচনে এমপি হন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ।

এবার এ আসনটিতেও বিএনপির বেশ কয়েকজন প্রার্থী মাঠে রয়েছেন। তার মধ্যে অন্যতম হলেন-বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ত্রাণ ও পুনর্বাসনবিষয়ক সহ-সম্পাদক ও রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলন। তিনি এর আগে ২০১৮ সালেও এই আসনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন। রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি রায়হানুল ইসলাম রায়হান এবং সাবেক ভূমি প্রতিমন্ত্রী প্রয়াত অ্যাডভোকেট কবির হোসেনের ছেলে নাসির হোসেন অস্থির। মোহনপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুস সামাদ।

এ আসনেও জামায়াতের একক প্রার্থী অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ। তিনি পাঁচবারের পবার হড়গ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান। জামায়াতের নেতাকর্মীরা ইতোমধ্যে তার পক্ষে আনুষ্ঠানিক প্রচার কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছে। এ ছাড়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী এখনও চূড়ান্ত না হলেও সাংগঠনিক তৎপরতার মাধ্যমে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

রাজশাহী-৪ (বাগমারা)

সারা দেশের ন্যায় রাজশাহী-৪ বাগমারা আসনেও জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার আগেই শুরু হয়ে গেছে মনোনয়ন যুদ্ধ। এই আসনটি শুধু বাগমারা উপজেলা নিয়েই গঠিত। এখানে মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৮০ হাজার ১৭৫ জন। আসনটিতে জামায়াতের একক প্রার্থী ঘোষণা করা হলেও দলীয় মনোনয়ন পেতে ইতোমধ্যেই সক্রিয় হয়ে উঠেছেন বিএনপি ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতারা। এই আসনের নির্বাচনের মাঠে বিএনপি, জামায়াত, জাতীয় পার্টি ও ভাসানী জনশক্তি পার্টির তৎপরতা দেখা যাচ্ছে। গত বছর ৫ আগস্ট প্রেক্ষাপট বদলের পর বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা বাড়ায় স্থানীয় রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে। দলীয় কর্মসূচির পাশাপাশি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকা-েও ব্যাপক উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের। বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজনের মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছেন।

এই আসনে এবার বিএনপির সম্ভাব্য মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সংখ্যা হাফ ডজন ছাড়িয়েছে। তাদের প্রত্যেকেই নিজ নিজ অবস্থান থেকে মনোনয়নের আশায় মাঠে কাজ করছেন এবং দলের দুঃসময়ে সক্রিয় ভূমিকা পালনের দাবি করছেন স্থানীয় নেতাকর্মী ও কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনে। মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন-উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ডিএম জিয়াউর রহমান জিয়া, উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব অধ্যাপক কামাল হোসেন, সাবেক ছাত্রদল নেতা ও আমেরিকা প্রবাসী ড. জাহিদ দেওয়ান শামীম, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যবিষয়ক সহ-সম্পাদক ডা. আশফাকুর রহমান শেলী, অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জহুরুল ইসলাম, জেলা যুবদলের সদস্য সচিব রেজাউল করিম টুটুল, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সদস্য ব্যারিস্টার সালেকুজ্জামান সাগর ছাড়াও আরও কয়েকজন রয়েছেন বলে জানা গেছে। এখানে বেশ কয়েকজন প্রতিদ্বন্দ্বী থাকায় দলীয় সংঘাতের ঝুঁকিরও আশংকা রয়েছে।

এদিকে জামায়াত প্রার্থী ঘোষণা করে তাদের সংগঠন কর্মকা- জোরদার করছে। তাদের মনোনয়ন পেয়েছেন ডা. আবদুল বারি সরদার, যিনি চিকিৎসাসেবার মাধ্যমে জনসমর্থন তৈরি করেছেন। তাকে শক্ত প্রার্থী হিসেবে দেখছেন অন্য দলগুলো।

এ ছাড়া আসনটিতে ভাসানী জনশক্তি পার্টির কেন্দ্রীয় মহাসচিব ড. আবু ইউসুফ সেলিমও সক্রিয় আছেন। তিনি এ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী। জাতীয় পার্টিরও সাংগঠনিক কর্মকা- সচল রয়েছে বলে জানান উপজেলা জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নাসির উদ্দিন এবং তিনিও মনোনয়নপ্রত্যাশী।

রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর)

পুঠিয়া ও দুর্গাপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত রাজশাহী-৫ আসন। এখানে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৮১৭ জন। সংসদীয় আসনে জামায়াতের একজন প্রার্থী হলেও বিএনপির দলীয় মনোনয়ন পেতে সরব হয়ে উঠেছেন কেন্দ্রীয় ও স্থানীয়সহ অন্তত আটজন নেতা। তারা হলেন-কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও পুঠিয়া উপজেলা আহ্বায়ক আবু বক্কর সিদ্দিক, বিএনপি মিডিয়া সেলের সদস্য ও কৃষক দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক মাহমুদা হাবিবা, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলাম ম-ল, শিল্পপতি ও সমাজসেবক মোহাম্মাদ আবদুস সাত্তার, ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক গোলাম মোস্তফা, শ্রমিক দল নেতা রোকনুজ্জামান আলম, পুঠিয়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি খায়রুল হক শিমুল ও বিএনপির জনপ্রিয় প্রয়াত সংসদ সদস্য নাদিম মোস্তফার ছেলে জুলকার নাঈম মোস্তফা।
অন্যদিকে জামায়াতের পক্ষ থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন জেলার সহকারী সেক্রেটারি নুরুজ্জামান লিটন। তিনি এলাকায় গণসংযোগ ও নির্বাচনি কার্যক্রম শুরু করেছেন। তিনি এ আসনে সম্ভাব্য যেকোনো প্রার্থীর জন্যই শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী বলে জানা গেছে। অন্যদিকে, জাতীয় পার্টি থেকেও সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় আছেন দলের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা ও জাতীয় পার্টির সাবেক এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক আবুল হোসেন।

রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট)

বাঘা ও চারঘাট উপজেলা নিয়ে গঠিত রাজশাহী-৬ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৪০ হাজার ৫২৭ জন। পদ্মা নদীর পাড়ঘেঁষা এই আসনটি রাজশাহীর পূর্বাঞ্চলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভোটের লড়াইয়ের মাঠ। এখানেও বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে চলছে জোর প্রতিযোগিতা। এ সুযোগে জামায়াতের একক প্রার্থী মাঠ দখলে নিতে নানা কৌশলে এগুচ্ছে। ইতোমধ্যে দল দুটির নেতাকর্মীদের মধ্যে একাধিক সহিংসতার ঘটনায় এই এলাকার রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে ক্রমেই উত্তপ্ত করছে।

এ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী ছয়জন। তারা হলেন-জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আলোচিত মুখ আবু সাঈদ চাঁদ, জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ও জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি আনোয়ার হোসেন উজ্জল, কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য দেবাশীষ রায় মধু, জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম মোস্তফা মামুন, বাঘা উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নুরুজ্জামান মানিক, বাঘা উপজেলার বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি বজলুর রহমান।

এদিকে জামায়াতের মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি অধ্যক্ষ নাজমুল হক। অন্যদিকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ থেকে এবার মনোনয়নপ্রত্যাশী রয়েছেন তিনজন। তারা হলেন-দলটির মালয়েশিয়া শাখার সভাপতি প্রবাসী মুফতি আমিরুল ইসলাম, রাজশাহী জেলা শাখার সিনিয়র সহ-সভাপতি মুফতি উমর ফারুক ও জেলা শাখার মুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক সম্পাদক আবদুস সালাম সুরুজ। তাদের তিনজনের বাড়িই বাঘা উপজেলায়।

অন্যদিকে, জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি শামসুদ্দিন রিন্টু নির্বাচনি এলাকার বিভিন্ন দলীয় ও সাংগঠনিক কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন। তিনি এই আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী।

ভিওডি বাংলা/ রমজান আলী / এমএইচ

  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
যোগানিয়া শিক্ষার্থী হত্যার বিচারের দাবীতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত
যোগানিয়া শিক্ষার্থী হত্যার বিচারের দাবীতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত
১৭ বছর পর নির্বাচনি এলাকায় বাবর
১৭ বছর পর নির্বাচনি এলাকায় বাবর
টেকনাফের সাবেক চেয়ারম্যান স্ত্রীর ৩ বছরের কারাদণ্ড
টেকনাফের সাবেক চেয়ারম্যান স্ত্রীর ৩ বছরের কারাদণ্ড