রাজশাহী সোনালী আঁশে স্বপ্ন বুনছে কৃষক


সোনালি আঁশ খ্যাত পাট চাষে একসময় ভাটা পড়েছিল রাজশাহী অঞ্চলে। দাম কমে যাওয়ায় আগ্রহ হারিয়েফেলেছিলেন অনেক কৃষক। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভালো দাম পাওয়ায় আবারও আগ্রহ তৈরি হয়েছে কৃষকদের মধ্যে। চলতি বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বাম্পার ফলনও হয়েছে বলে জানিয়েছেন চাষিরা। ফলে নতুন করে স্বপ্ন বুনতে শুরু করেছেন কৃষকরা।
এইবছর রাজশাহী বিভাগে পাটের আবাদ উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি অফিস। তাদের দেয়া তথ্যমতে, রাজশাহী বিভাগে চলতি বছরে ৫৩ হাজার ৮৩৫ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। আর রাজশাহী জেলায় ১৭ হাজার ৩০৫ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে এই সোনালী আঁশের যা গত বছরের তুলনায় ৩০০ হেক্টর বেশি। এইবছর পাটের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪৫ হাজার ৩৮৫ মেট্রিক টন এবং সম্ভাব্য উৎপাদন হবে ৪৭ হাজার ৪১৫ মেট্রিক টন। গত বছরের তুলনায় পাটের আবাদ এবং উৎপাদন দুটোই বেশি।
পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হওয়ায় সেচ খরচও বাড়েনি এবং অনুকূল আবহাওয়ার কারণে রোগ-পোকার আক্রমণ তুলনামূলক কম হয়েছে। কৃষি বিভাগ মনে করছে, বাজারে ভালো দাম পেলে লাভবান হবেন কৃষকেরা, যা ভবিষ্যতে পাটের চাষ আরও বাড়াতে সহায়ক হবে।
বর্তমান বাজার অনুযায়ী প্রতিমণ পাট বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ৪ হাজার টাকা মণ। যা গত বছর ছিল আড়াই হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা মণ। এইবছর বাড়তি দাম পেয়ে খুশি সাধারণ চাষি ও ব্যবসায়ীরা। সরেজমিনে জেলার কয়েকটি উপজেলায় ঘুরে দেখা যায়, জমি থেকে পাট কর্তন করে পানিতে জাগ দেয়া এবং কিছু জায়গায় পাট ছাড়িয়ে নেয়ার কাজ করছেন চাষিরা।
জেলার পবা উপজেলার শ্রীপুর গ্রামের চাষি জিয়ারুল হক বলেন, ‘গত বছর পাঁচ বিঘা জমিতে পাটের চাষ করেছিলাম। মোটামুটি দাম পাওয়ায় লোকসান হয়নি। এবার ৮ বিঘা জমিতে আবাদ করেছি। ফলন ভালো হয়েছে। ন্যায্য দাম পেলে ভালো লাভ হবে।’
মোহনপুর উপজেলার মৌগাছি ইউনিয়নের বিদিরপুর গ্রামের চাষি তোজাম্মেল হোসেন বলেন, ‘পাট চাষে সবচেয়ে বড় সমস্যা হয় জাগ দেওয়ার জায়গা পাওয়া। অনেক সময় দূরে জাগ দিতে গিয়ে খরচ বেড়ে যায়। তবে এবার বর্ষা আগেই শুরু হওয়ায় সেই সমস্যাও হয়নি। আশা করছি এবার দাম ভালো পাব। আমরা স্বপ্ন দেখছি, পাট চাষে আমাদের মতো কৃষকদের সুদিন ফিরবে।’
মোহনপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম বলেন, ‘পাট চাষে কৃষকদের মধ্যে সুদিন ফিরেছে। সরকার প্রণোদনা দেওয়ায় কৃষকেরা উপকৃত হয়েছেন। পাটজাত পণ্যের ব্যবহার উৎসাহিত হওয়ায় এর কদরও বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে বাজারমূল্যও। তবে কৃষক যাতে কাঙ্খিত দাম পায়, সে জন্য বাজার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।’
বিগত বছরের তুলনায় পাটের চাষাবাদ বেড়েছে জানিয়ে রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক উম্মে ছালমা বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় পাটের আবাদ এবং উৎপাদন দুইটাই বেশি হয়েছে। রাজশাহী জেলায় এই বছর ১৭ হাজার ৩০৫ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। আমাদের সম্ভাব্য উৎপাদন ৪৭ হাজার ৪১৫ মেট্রিক টন আর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪৫ হাজার ৩৮৫ মেট্রিক টন। সার্বিক ভাবে এই বছর পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হওয়ায় পাট পঁচাতে কোন সমস্য হচ্ছে না। এখন পর্যন্ত জেলায় জমি থেকে ৩০ শতাংশ পাট কর্তন হয়েছে। দাম ভালো থাকায় আশা করছি কৃষক এইবার লাভবান হবেন।
ভিওডি বাংলা/ এমএইচ