দেশে গিরা, পেশী ও হাড়ের ব্যথায় ভুগছেন ৪ কোটি মানুষ


দেশে গিরা, পেশী ও হাড়ের ব্যথাজনিত রোগে ভুগছেন প্রায় ৪ কোটি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাবে বাড়ছে অপচিকিৎসার ঝুঁকি । এই সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। অথচ দেশে এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাব রয়েছে, যার ফলে রোগীরা অপচিকিৎসার ঝুঁকিতে পড়ছেন। দেশের স্বাস্থ্য খাতে এ সংকট মোকাবিলায় দ্রুত সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
শনিবার (৯ আগস্ট) রাজধানীর শহীদ আবু সাইদ কনভেনশন সেন্টারে প্রফেসর নজরুল রিউমাটোলজি ফাউন্ডেশন অ্যান্ড রিসার্চ (PNRFR) ট্রাস্ট আয়োজিত এক রোগী সচেতনতামূলক অনুষ্ঠানে এ বিষয়ে আলোচনা হয়।
অনুষ্ঠানে বাতরোগ ও ব্যথাজনিত সমস্যার সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান উপস্থাপন করা হয়। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে রোগী ও চিকিৎসকরা এতে অংশ নেন। দিনব্যাপী আয়োজনে বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ উপস্থাপন, প্রশ্নোত্তর পর্ব এবং হাতে-কলমে ব্যায়াম শেখানো হয়, যা রোগীদের দৈনন্দিন জীবনে সহায়ক হবে বলে জানানো হয়।
বিশ্ব ও দেশের পরিস্থিতি: গ্লোবাল বার্ডেন অব ডিজিজ অনুসারে, বিশ্বে প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজন গিরা, পেশী বা হাড়ের ব্যথায় ভুগছেন। প্রতিবছর প্রায় ৩ কোটি মানুষ নতুন করে এ ধরনের সমস্যায় আক্রান্ত হচ্ছেন।
বাংলাদেশে পরিচালিত 'কমিউনিটি ওরিয়েন্টেড প্রোগ্রাম ফর কন্ট্রোল অব রিউমেটিক ডিসিজ’ (কপকর্ড) নামক একটি গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের প্রাপ্তবয়স্কদের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ - অর্থাৎ প্রায় ৪ কোটি মানুষ- গিরা, পেশী কিংবা হাড়ের সমস্যায় আক্রান্ত।
রোগের বিবরণ ও পরিসংখ্যান
রিউমাটয়েড আর্থারাইটিস: প্রায় ১৭.৫ লাখ রোগী; প্রতিবছর প্রায় ৬,৫০০ নতুন রোগী যুক্ত হচ্ছে, স্পন্ডাইলো আর্থ্রাইটিস: আক্রান্ত প্রায় ১২.৫ লাখ, গাউট: ভোগছেন প্রায় ৫.৫ লাখ মানুষ, হাইপার ইউরেসেমিয়া (উচ্চ ইউরিক অ্যাসিড): প্রায় ১.৫ কোটি মানুষ আক্রান্ত, অস্টিওআর্থ্রাইটিস (বয়সজনিত হাঁটুর ব্যথা): প্রায় ১.২৫ কোটি মানুষ আক্রান্ত; প্রতিবছর ১৩ লাখ নতুন রোগী ও লাম্বার স্পন্ডাইলোসিস (কোমরের ব্যথা): আক্রান্ত প্রায় ১ কোটি ৬ লাখ, প্রতিবছর ৩ লাখ নতুন রোগী।
বিশেষজ্ঞদের মতামত: অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডা. নীরা ফেরদৌস, সহকারী অধ্যাপক, এম এইচ শমরিতা মেডিকেল কলেজ। তিনি বলেন, ‘বাত রোগীর সংখ্যা বাড়লেও দেশে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাব রয়েছে, যার ফলে রোগীরা ভুল চিকিৎসার ঝুঁকিতে পড়ছেন। সরকারি পর্যায়ে এ বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।’
PNRFR-এর চেয়ারম্যান ও এশিয়া প্যাসিফিক লীগ অব অ্যাসোসিয়েশন ফর রিউমাটোলজির ভাইস প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘দরিদ্র মানুষ চিকিৎসায় পর্যাপ্ত সহযোগিতা পাচ্ছেন না। আমরা তাদের পাশে দাঁড়িয়ে সচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছি।’
অনুষ্ঠানে চিকিৎসকরা জানান, বাত ও ব্যথাজনিত সমস্যায় আক্রান্ত রোগীদের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চিকিৎসকের সংকট রয়েছে। এর ফলে রোগীদের শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটছে।
অন্যান্য আয়োজন: অনুষ্ঠানে মেধাবী শিক্ষার্থীদের হাতে শিক্ষা বৃত্তির চেক এবং একজন কিডনি রোগীকে আর্থিক সহায়তার চেক প্রদান করা হয়। এছাড়াও, পিছিয়ে পড়া গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে অবদান রাখায় ‘হ্যাডস’ সংস্থার নির্বাহী পরিচালক মো. বদরুদ্দোজাকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন: জহিরুল ইসলাম, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন, ড. আমিনুল ইসলাম, যুগ্ম সচিব, ডা. বর্ষা ইসলাম, ডেপুটি সেক্রেটারি, বাধন দাস, কোষাধ্যক্ষ
এছাড়াও সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
ভিওডি বাংলা/জা