হাসপাতালে বেড়েছে রোগীর চাপ


ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় হঠাৎ করে বেড়েছে সর্দি, জ্বর, গলাব্যথা ও কাশিতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। জুলাই মাসের প্রথম ১৪ দিনের তুলনায় পরের ১৪ দিনে ঢাকার সরকারি হাসপাতালগুলোতে বেড়েছে রোগী ভর্তির হার। ফলে সেবা দিতে গিয়ে অনেকটাই চাপে পড়েছে হাসপাতালগুলো। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি সাধারণ ভাইরাল ফ্লু হলেও এর সংক্রমণ গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার বেশি। ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে জনসচেতনতা কম থাকায় সংক্রমণ ছড়াচ্ছে দ্রুত।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জ্বর নিয়ে আসা রোগীদের বেশিরভাগই করোনা, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, টাইফয়েড কিংবা সাধারণ মৌসুমি ভাইরাসজনিত জ্বরে আক্রান্ত। উপসর্গগুলোর মধ্যে রয়েছে চার থেকে পাঁচদিন স্থায়ী জ্বর, গলাব্যথা, হালকা কাশি, মাথা ও শরীর ব্যথা, দুর্বলতা এবং কিছু ক্ষেত্রে হালকা শ্বাসকষ্ট।
চিকিৎসকদের ভাষ্য, একজন সদস্য আক্রান্ত হওয়ার পর পরিবারের অন্য সদস্যরাও অল্প সময়ের মধ্যে জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন। অনেক পরিবার থেকেই একই দিনে দুই বা তিনজন রোগী হাসপাতালে আসছেন। উপসর্গ প্রায় সবার ক্ষেত্রেই মিলছে, যার ফলে চিকিৎসকদের ধারণা— এটি ঋতু পরিবর্তনজনিত ভাইরাল সংক্রমণ ও শ্বাসতন্ত্রের রোগের সম্মিলিত ফল।
রাজধানীজুড়ে হঠাৎ করে ভাইরাল জ্বর, সর্দি, কাশি ও ডেঙ্গু উপসর্গে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে। জুলাই মাসের প্রথম ১৪ দিনের তুলনায় পরের ১৪ দিনে ঢাকার সরকারি হাসপাতালগুলোতে রোগী বেড়েছে গড়ে ১৮ শতাংশেরও বেশি। ফলে সেবা দিতে গিয়ে চাপে পড়েছে সরকারি হাসপাতালগুলো।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের তথ্য বলছে, জুলাইয়ের প্রথম ১৪ দিনে হাসপাতালটির মেডিসিন বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছেন ৮ হাজারের বেশি রোগী। আর ১৪ থেকে ২৮ জুলাইয়ের মধ্যে চিকিৎসা নিয়েছেন সাড়ে ৯ হাজারের বেশি রোগী। এই ১৪ দিনের ব্যবধানে রোগী বেড়েছে ১৮ শতাংশের বেশি। একই সময়ে এই হাসপাতালে করা হয়েছে ৭৫ হাজারের বেশি ভাইরাস জ্বর-সংক্রান্ত বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা।
রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১১তলায় ডেঙ্গু কর্নার ঘুরে (গত ২৯ জুলাই) দেখা গেছে, সেখানে ভর্তি রয়েছেন ৩৪ জন রোগী, যাদের মধ্যে ১৪ জন নারী। আর শিশু বিভাগের আটতলার ডেঙ্গু কর্নারে চিকিৎসা নিচ্ছে ১১ জন শিশু।
হাসপাতালের তথ্য বলছে ১ জুলাই থেকে ২৮ জুলাই পর্যন্ত হাসপাতালটিতে ভর্তি রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫৪৫ জনে। এর মধ্যে প্রথম ১৪ দিনে ভর্তি ৭২৫ জন এবং পরের ১৪ দিনে ভর্তি হয়েছেন ৮২০ জন। হাসপাতালের পরিসংখ্যান বিভাগের তথ্য বলছে, সাধারণ ভাইরাল জ্বর, ইনফ্লুয়েঞ্জা ও ডেঙ্গু মিলিয়ে রোগীর চাপ আগের তুলনায় দ্বিগুণের কাছাকাছি।
এদিকে চিকিৎসক ও ফার্মেসিগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অনেকেই হালকা থেকে মাঝারি মাত্রার সর্দি-জ্বর, গলাব্যথা, কাশি ও দুর্বলতা নিয়ে বাসায় থেকেই সেবা নিচ্ছেন—ফার্মেসির পরামর্শ, পরিচিত চিকিৎসক বা টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে। ফলে প্রকৃত আক্রান্তের সংখ্যা হাসপাতাল পরিসংখ্যানের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই রোগীদের তথ্য বাইরে না আসায় পরিস্থিতির পূর্ণমাত্রা বোঝা কঠিন হয়ে পড়ছে, যা জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে গিয়ে চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখন প্রতিদিনই এমন বহু রোগী আসছেন, যারা একই পরিবারের দুই বা তিন সদস্যকে নিয়ে এসেছেন। কারও ছেলে বা মেয়ে আগে আক্রান্ত হয়েছে, তার পরদিনই মা-বাবা বা অন্য ভাইবোনও জ্বরে পড়ে যাচ্ছেন। এমন ধারাবাহিক সংক্রমণের ঘটনায় চিকিৎসকরা মনে করছেন, এটি ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কোনো ভাইরাল সংক্রমণ, যার সঙ্গে রয়েছে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ বা ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো ভাইরাসের প্রভাব।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক ডা. মেহেদী হাসান বলেন, আমরা গত দুই সপ্তাহ ধরে যেটা সবচেয়ে বেশি দেখছি, তা হলো একটা পরিবারের একজন সদস্য প্রথমে আক্রান্ত হচ্ছে। ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বাড়ির অন্যরাও একই উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে আসছেন। উপসর্গগুলো প্রায় একই শরীর ব্যথা, গলা খুসখুসে ব্যথা, মাঝারি জ্বর, মাথা ভার লাগা এবং কিছু ক্ষেত্রে হালকা কাশি।
তিনি বলেন, আমরা গত এক সপ্তাহে এমন অন্তত ১০-১২টি কেস পেয়েছি, যাদের একেক করে পরিবারের একাধিক লোক একসঙ্গে জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন। একইসঙ্গে সবাই আক্রান্ত হওয়া এবং উপসর্গ প্রায় একরকম হওয়া— এটি ভাইরাসের উচ্চ সংক্রমণ ক্ষমতার ইঙ্গিত দেয়।
অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ বলেন, ভাইরাল জ্বরের পাশাপাশি ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া নিয়েও বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে। তিনি জানান, ডেঙ্গুতে সাধারণত মাথাব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা, পাতলা পায়খানা এবং পেট ব্যথার প্রবণতা বেশি দেখা যায়। অন্যদিকে চিকুনগুনিয়ায় শরীরজুড়ে ব্যথার পাশাপাশি বিশেষ করে হাড়ের সন্ধিতে এবং মাংসপেশিতে তীব্র ব্যথা হয়। অনেক সময় লালচে র্যাশও ওঠে। দুই রোগের উপসর্গ মিলিয়ে গেলে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ না খাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
মুগদা জেনারেল হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম বলেন, হাসপাতালে আসা বেশিরভাগ রোগীর ক্ষেত্রেই জ্বর, গলাব্যথা, কাশি, দুর্বলতা—এই চারটি উপসর্গ দেখা যাচ্ছে। এগুলো সাধারণ ভাইরাল ইনফেকশনের লক্ষণ হলেও পাশাপাশি ডেঙ্গু এবং ইনফ্লুয়েঞ্জার সংক্রমণও লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যা পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলেছে।
তিনি বলেন, আমাদের ধারণা, একাধিক ভাইরাস এখন একসঙ্গে মানুষের মধ্যে ছড়াচ্ছে। কেউ কেউ প্রাথমিক চিকিৎসা না নিয়েই জটিল অবস্থায় হাসপাতালে আসছেন, এতে ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, চলতি মাসে ইনফ্লুয়েঞ্জা, ডেঙ্গু ও অন্যান্য ভাইরাল সংক্রমণের কারণে রোগীর চাপ গত মাসের তুলনায় অনেক বেড়েছে। প্রতিদিনই নতুন রোগী আসছেন, যাদের কেউ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত, কেউ ইনফ্লুয়েঞ্জা বা সাধারণ ভাইরাল ফ্লুতে ভুগছেন।
ভিওডি বাংলা/ এমপি
৫ আগস্ট পর্যন্ত অপেক্ষা করবে বিএনপি
লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান …

শুদ্ধি অভিযানে বিএনপি
মোক্তাদির হোসেন প্রান্তিক
শিগগিরই বিএনপিতে শুদ্ধি অভিযান শুরু হচ্ছে। কেন্দ্র থেকে …
