• ঢাকা বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩ পৌষ ১৪৩১

ভোটার সংখ্যা ৩৯৯৩২, ছাত্রী ৪৭ শতাংশ

ডাকসু ভোটে আলোচনায় যারা

নিজস্ব প্রতিবেদক    ৩০ জুলাই ২০২৫, ০৯:১২ পি.এম.
ছবি: সংগৃহীত

আবারও নির্বাচনের পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)। তফসিল ঘোষণার পর ক্যাম্পাসে বইছে উচ্ছ্বাস, কৌতূহল আর রাজনৈতিক উত্তেজনার প্রবল হাওয়া। সবশেষ ২০১৯ সালের ডাকসু নির্বাচন ঘিরে নানান বিতর্ক, অনিয়ম ও ফলাফলকেন্দ্রিক প্রতিক্রিয়া এখনো বেশ তরতাজা। সেই অভিজ্ঞতা পেরিয়ে এবার অনেকটা ভিন্ন প্রেক্ষাপটে সামনে এসেছে ডাকসু নির্বাচন। এরই মধ্যে ছাত্রসংগঠনগুলো ভোটের মাঠ ধরতে সাজাতে শুরু করেছে নির্বাচনী রণকৌশল।

এবার ডাকসুতে মোট ২৮টি পদে নির্বাচন হবে। আগের মতোই সহ-সভাপতি (ভিপি), সাধারণ সম্পাদক (জিএস), সহ-সাধারণ সম্পাদকের (এজিএস) মতো গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো থাকছে।

তবে এবার সংযোজন করা হয়েছে চারটি নতুন পদ—গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক, ক্যারিয়ার উন্নয়ন সম্পাদক, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পাদক এবং মানবাধিকার ও আইনবিষয়ক সম্পাদক। শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে নতুন এ পদগুলো যুক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে ডাকসু নির্বাচনের ঘোষিত তফসিলে বলা হয়, আগামী ৯ সেপ্টেম্বর ডাকসু নির্বাচন। নির্বাচন ঘিরে বিভিন্ন পদে সম্ভাব্য প্রার্থী নিয়ে এরই মধ্যে ছাত্রসংগঠনগুলোর ভেতর চলছে জোর আলোচনা।

জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থান পরবর্তীকালে গঠিত ‘গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ’র নেতারা এবার ডাকসু নির্বাচনে বড় প্রভাব ফেলতে পারেন বলে ধারণা করছেন অনেকে। সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে আহ্বায়ক আবু বাকের মজুমদার, সদস্যসচিব জাহিদ আহসান, মুখ্য সংগঠক তাহমিদ আল মুদ্দাসির চৌধুরী এবং ঢাবি শাখার আহ্বায়ক আব্দুল কাদের আছেন সম্ভাব্য প্রার্থীর আলোচনায়। তারা সবাই জুলাই অভ্যুত্থানে ছিলেন সামনের কাতারে।

সংগঠনটির ঢাবি শাখার আহ্বায়ক আব্দুল কাদের বলেন, ‘আমাদের সংগঠন থেকে আমি ভিপি পদপ্রার্থী ও জিএস পদে নির্বাচন করার ব্যাপারে আবু বাকেরকে ফিক্সড করা হয়েছে।’ জানা গেছে, এজিএস পদের দৌড়ে আলোচনা আছেন কেন্দ্রীয় সদস্যসচিব জাহিদ আহসান ও মুখ্য সংগঠক তাহমিদ আল মুদ্দাসির।

আব্দুল কাদের বলেন, ‘বিলম্বিত হলেও তফসিল ঘোষণা এসেছে, এটি একটি আশা জাগানিয়া দিক। আমাদের সন্দেহের জায়গা হলো, এই যে সময়ক্ষেপণ হলো এখানে প্রশাসন একপ্রকার জুজুর ভয় দেখছে। অমুক না এলে কী হবে, তমুক না এলে কী হবে। তারা যদি এই জুজুর ভয়টা কাটিয়ে উঠতে পারে, তাদের মূল শক্তির জায়গা শিক্ষার্থীদের শক্তিকে যদি অনুভব করে তাহলে এই যে তফসিল দেওয়ার সাহস দেখিয়েছে, নির্বাচনও করতে পারবে।’

তিনি বলেন, ‘ছাত্রসংগঠন হিসেবে আমরা অবশ্যই একটা প্যানেল দেবো, সেটা সেন্ট্রাল এবং হল পর্যায়েও থাকবে। আমরা সবার সঙ্গে একত্রিত হয়ে একটি প্যানেল দিতে চাই। অভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে অনেকগুলো স্বতন্ত্র মুখ উঠে এসেছে, যারা কোনো ছাত্রসংগঠনের ঘরে যায়নি, তাদের গ্রহণযোগ্যতা আছে, কাজ করার আকুতি আছে—ওই মানুষগুলোকে আমরা প্যানেলে ইনক্লুড করার চেষ্টা করছি।’

ছাত্রদলের একাধিক নেতা ভোটে লড়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন, জোর গুঞ্জন আছে তাদের নিয়ে। এর মধ্যে রয়েছেন ঢাবি শাখার সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস, সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবিদুল ইসলাম খান ও কবি জসীম উদ্‌দীন হল শাখার প্রচার সম্পাদক তানভীর বারী হামিম

‘নারী হলগুলো থেকে ছয়-সাতজনের প্রতিনিধি রাখার চেষ্টা করবো। জগন্নাথ হল, টিএসসির সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন থেকেও আমরা প্রতিনিধি রাখার চেষ্টা করবো। ডাকসুতে শুধু জয় পাওয়াই মূল লক্ষ্য নয়, এটি যেন ইফেকটিভ হয়- আমরা সেভাবেই কাজ করবো। কেউ যেন বলতে না পারে ডাকসু হয়ে লাভটা হলো কি’- বলেন আব্দুল কাদের।

ডাকসু নির্বাচন ঘিরে ভোটের লড়াইয়ে নামার জোর আলোচনায় আছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র উমামা ফাতেমা। এরই মধ্যে রাজনীতিতে নিজের একটা ‘পরিচ্ছন্ন অবস্থানও’ তৈরি করেছেন তিনি। ডাকসুর ভোটযুদ্ধে নামতে পারেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির বর্তমান সভাপতি মহিউদ্দিন মুজাহিদ মাহি, আছে এমন আলোচনাও।

মহিউদ্দিন মুজাহিদ মাহি বলেন, ‘ডাকসুতে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা আছে। উমামা ফাতেমাসহ একটা স্বতন্ত্র প্যানেল হবে। আমরা মূলত একটি অরাজনৈতিক প্যানেল দিতে চাই, যেটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আকাঙ্ক্ষায় কাজ করবে। গণঅভ্যুত্থান পরবর্তীসময়ে এটিই সবচেয়ে মোক্ষম সময় বাস্তবিক অর্থে বিশ্ববিদ্যালয়ের অটোনমি ফিরে পাওয়া। এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার যে স্বকীয় রূপ সেখানে ফিরে যাওয়া ও সেই উদ্দেশ্য হাসিলে এগিয়ে যাওয়া।’

ডাকসু নির্বাচন ঘিরে বিভিন্ন মতাদর্শ, আন্দোলন ও সংগঠনের তরুণ নেতাদের অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নির্বাচনের প্রতিযোগিতা আরও তীব্র করে তুলছে। অনেকের ধারণা, এবারের ডাকসু নির্বাচন হতে পারে বিগত কয়েকটি নির্বাচনের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত

ভোটে আসার বিষয়ে উমামা ফাতেমা বলেন, ‘আমাদের চেষ্টা চলছে। আলাপ-আলোচনা চলছে। যারা ক্যাম্পাসে বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করেছে, পাশে থেকেছে, কিন্তু কোনো ছাত্রসংগঠনের সঙ্গে নেই, তাদের নিয়ে প্যানেল দেওয়ার চেষ্টা করছি।’

জুলাই অভ্যুত্থানের পর নতুনভাবে আলোচনায় আসা ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি আবু সাদিক কায়েম এবং শিবিরের ঢাবি শাখার বর্তমান সভাপতি এস এম ফরহাদের ডাকসু ভোটে প্রার্থী হওয়ার বেশ জোর গুঞ্জন রয়েছে ক্যাম্পাসে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিবিরের ঢাবি শাখার সেক্রেটারি মহিউদ্দিন খান বলেন, ‘ডাকসু নির্বাচনের ঘোষিত তফসিলকে আমরা স্বাগত জানাই। এটি যদিও দেরিতে দেওয়া হয়েছে, তবুও আমরা আশাবাদী যে ঘোষিত তারিখগুলোতে যে কার্যক্রম পরিচালিত হওয়ার কথা, সেগুলো ঠিকঠাকভাবে হলে নির্ধারিত সময়ে ডাকসু নির্বাচন হওয়া সম্ভব।’

তিনি বলেন, ‘কেন্দ্রীয় প্যানেলের ব্যাপারে আমরা পরিকল্পনা সাজিয়েছি, আমরা কাজ করছি। ডাকসু নির্বাচনকেন্দ্রিক যে মানসিক ও সাংগঠনিক প্রস্তুতি তা আমরা বেশ আগে থেকেই নিচ্ছি। দ্রুত আমরা সেটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করবো।’

বামপন্থি ছাত্রসংগঠনগুলো থেকেও উঠে আসছে সম্ভাব্য প্রাথীদের নাম। বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের ঢাবি শাখার সভাপতি মেঘমল্লার বসু ও বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রীর নেতা জাবির আহমেদ আছেন আলোচনায়। জোর গুঞ্জন রয়েছে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের ঢাবি শাখার আহ্বায়ক মোজাম্মেল হককে নিয়েও।

মোজাম্মেল হক বলেন, ‘নির্বাচন ঘিরে নিরাপত্তা জোরদার করা দরকার, যেন এটি আবার ২০১৯ এর ডাকসু না হয়ে যায়। প্রশাসনের এ দিকগুলো দেখা উচিত, যেন প্রতিটি সংগঠন স্বাধীনভাবে মতামত দিতে পারে, যেন একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অবাধ নির্বাচন হয়।’

তিনি বলেন, ‘আমরা সেন্ট্রাল ও হল প্যানেল দেবো। গণতান্ত্রিক ছাত্রসংগঠনগুলো তো আছে। এর বাইরে সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ও ব্যক্তি যারা আছে, যাদের সঙ্গে আমাদের চিন্তা কাছাকাছি পর্যায়ে বা সমমনা তাদের সঙ্গে নেবো। এক্ষেত্রে যারা গণতান্ত্রিক চিন্তাধারার, যারা শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা রাখে বা আমাদের কাজের সঙ্গে যাদের মিল আছে, তাদেরও সঙ্গে রাখবো।’

সব আলোচনা-সমালোচনা ছাপিয়ে ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতা বিন ইয়ামিন মোল্লার নামও ডাকসুর সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় স্থান পেয়েছে। শেষবার ডাকসু নির্বাচনে ভিপি পদে জয় পাওয়া নুরুল হক নুরের রাজনৈতিক দল গণঅধিকার পরিষদের ছাত্রসংগঠন ছাত্রঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা।

ডাকসু নির্বাচন ঘিরে বিভিন্ন মতাদর্শ, আন্দোলন ও সংগঠনের তরুণ নেতাদের অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নির্বাচনের প্রতিযোগিতা আরও তীব্র করে তুলছে। অনেকের ধারণা, এবারের ডাকসু নির্বাচন হবে গত কয়েকটি নির্বাচনের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ।

স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংসদের আহ্বায়ক জামালুদ্দিন খালিদ, যিনি ক্যাম্পাসে সুপরিচিত অ্যাকটিভিস্ট হিসেবে, তিনিও রয়েছে সম্ভাব্য প্রার্থীর আলোচনায়। ‘ইউনিটি ইন ডাইভার্সিটি’ ট্যাগলাইনে তিনি একটি প্যানেল গঠনের চেষ্টায় রয়েছেন বলে জানা গেছে।

এছাড়া শামীম হোসেন নামে ইংরেজি বিভাগের এক শিক্ষার্থীও প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে ক্যাম্পাসে আলোচনায় আছেন। তিনি গণরুম গেস্টরুমবিরোধী আন্দোলন, ডিডিটাল নিরাপত্তা আইনবিরোধী আন্দোলনসহ বিভিন্ন অ‍্যাকটিভিজমের জন্য ক্যাম্পাসে বেশ সুপরিচিত।

ভিওডি বাংলা/ এমপি

  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
রাজনৈতিক ট্যাগ এড়িয়ে যাওয়া সেই এষা এখন ছাত্রদলের নেতা
রাজনৈতিক ট্যাগ এড়িয়ে যাওয়া সেই এষা এখন ছাত্রদলের নেতা
একাদশে ভর্তি, অনলাইনে আবেদন শুরু
একাদশে ভর্তি, অনলাইনে আবেদন শুরু
কম্বাইন্ড ডিগ্রির দাবিতে উত্তাল বাকৃবি, অনুষদীয় গেটে তালা
কম্বাইন্ড ডিগ্রির দাবিতে উত্তাল বাকৃবি, অনুষদীয় গেটে তালা