বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও ধর্মীয় সহনশীলতা নিয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সংস্থা ইউএসসিআইআরএফ। সংস্থাটি চলতি জুলাই মাসে প্রকাশিত এক বিশেষ রিপোর্টে দেশের রাজনৈতিক রূপান্তর ও সাম্প্রতিক সহিংসতার পরিপ্রেক্ষিতে এসব আশঙ্কার কথা তুলে ধরেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইউনাইটেড স্টেটস কমিশন অন ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম’ (ইউএসসিআইআরএফ) বাংলাদেশের ধর্মীয় স্বাধীনতা পরিস্থিতি নিয়ে সম্প্রতি একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। জুলাই মাসে সংস্থাটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ওই রিপোর্টে বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের প্রতি সহিংসতা, সংবিধান সংস্কারে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ শব্দ বাদ দেওয়ার প্রস্তাব, এবং ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতসংক্রান্ত আইন ও তার প্রয়োগ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।
রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২৪ সালের রাজনৈতিক পরিবর্তনের সময় – বিশেষ করে শেখ হাসিনার দেশত্যাগ ও অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের মধ্যবর্তী আগস্ট মাসে – দেশে প্রশাসনিক শূন্যতা দেখা দিলে ভয়াবহ সহিংসতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটে। ওই সময় সংখ্যালঘু হিন্দুদের ওপর একাধিক হামলার তথ্য উঠে আসে, যা আওয়ামী লীগের সমর্থক হিসেবে পরিচিতদের টার্গেট করে চালানো হয় বলে রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে।
পুলিশি তথ্যের ভিত্তিতে রিপোর্টে বলা হয়, ৫ থেকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত ১,৭৬৯টি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে, যার মধ্যে ২০টি ছিল সাম্প্রদায়িক।
সংস্থাটি আরও জানায়, অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ শব্দটি বাদ দিয়ে ‘বহুসংস্কৃতিবাদ’ বা ‘বহুত্ববাদ’ যুক্ত করার সুপারিশ করেছে, যা বিরোধী দল বিএনপির বিরোধিতার মুখে পড়ে। বিএনপি এর পরিবর্তে ‘আল্লাহর ওপর অবিচল আস্থা’ শব্দবন্ধ যোগ করার প্রস্তাব দিয়েছে। জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপি আংশিক সমর্থন জানালেও তারা ‘বহুত্ববাদ’ না বলে বাংলা বিকল্প ‘বহুসংস্কৃতিবাদ’ ব্যবহারের পক্ষে মত দেয়।
রিপোর্টে আরও উঠে এসেছে নারী সংস্কার কমিশনের সুপারিশ নিয়ে ইসলামী সংগঠনগুলোর তীব্র প্রতিক্রিয়া, হেফাজতের বিক্ষোভ এবং নারীবিরোধী বক্তব্য। একইসঙ্গে ইসলামী আন্দোলনের পক্ষ থেকে নারী ফুটবল ম্যাচ বাতিল ও একজন নারী অধ্যাপককে হুমকি দিয়ে বদলি করতে বাধ্য করার ঘটনাও তুলে ধরা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের এই রিপোর্টে বাংলাদেশে ব্লাসফেমি আইন, ২০২৩ সালের সাইবার নিরাপত্তা আইন এবং ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত সংক্রান্ত ধারার অপব্যবহার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
রিপোর্টের উপসংহারে বলা হয়, সংখ্যালঘুদের অন্তর্ভুক্তি ছাড়া সংবিধান সংস্কার দীর্ঘমেয়াদে বৈষম্য আরও গভীর করতে পারে। বাংলাদেশে ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষায় একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি ও সকল অংশের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা জরুরি।
ভিওডি বাংলা/ডিআর