‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’
রাজনৈতিক দলগুলো আসলে কী চায়?


নিজস্ব প্রতিবেদক
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে জামায়াত ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণঅধিকার পরিষদ, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনসহ সমমনা কিছু দল অভিযোগ তুলেছে, ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নেই। তাই বিদ্যামান পরিস্থিতিতে নির্বাচন সম্ভব নয়। রাজনৈতিক দলগুলো মূলত কি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড চায়, নাকি পেছনে অন্য উদ্দেশ্য আছে। দলগুলোর চাওয়া আসলে কী?
প্রতিটি জাতীয় নির্বাচনের আগে বিরোধী মতের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত বা চর্চিত বাক্য হলো ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বা নির্বাচনের জন্য সমতল মাঠ নেই’। নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান নির্বাচন কমিশনের (ইসি) বিরুদ্ধে সরাসরি পক্ষপাতমূলক আচরণের অভিযোগ আনে রাজনৈতিক দলগুলো। পাশাপাশি ইসিকে সরাসরি ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠানও মনে করা হয়। আওয়ামী লীগের আমলে বিগত তিনটি নির্বাচন ভোটারবিহীন ও একতরফা হওয়ায় ইসির ওপর আরও বেশি আস্থা সংকটে ভুগছে রাজনৈতিক দলগুলো। তবে এবারের পরিস্থিতি গত তিনটি নির্বাচনের চেয়ে আলাদা।
বর্তমানে দেশে সরাসরি কোনো রাজনৈতিক দল ক্ষমতাসীন নেই। দীর্ঘ প্রায় সাড়ে ১৫ বছর পর গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বিদায় নেয় শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকার। এরপর গত ৮ আগস্ট ড. মূহাম্মদ ইউনুসকে প্রধান উপদেষ্টা করে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়, যা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ফসল হিসেবেই পরিচিতি পায়। সরকারপ্রধান ড. ইউনূসও একাধিকবার বলেছেন, আন্দোলন করে এসব ছেলেরাই আমাকে চেয়ারে বসিয়েছে। তাছাড়া প্রথম গঠিত উপদেষ্টা প্যানেলে ছাত্রদের প্রতিনিধি হিসেবে নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়া এবং পরে মাহফুজ আলমকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তবে কয়েক মাস পর নাহিদ উপদেষ্টার পদ ছেড়ে রাজনৈতিক দল এনসিপি গঠন করে।
তাছাড়া আন্দোলনের বৃহৎ অংশীদার দাবি করা জামায়াত ইসলামীরও প্রশাসনসহ বিভিন্ন সেক্টরে দলীয় অনুগতরা দায়িত্বে আছেন বলে চাওর আছে। অর্থাৎ বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর সরাসরি জামায়াত এবং এনসিপির প্রভাব রয়েছে।
২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন হচ্ছে এমনটা ধরেই বিএনপিসহ কিছু সমমনা দল পুরোপুরি নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। অথচ জামায়াত, এনসিপি, গণঅধিকার পরিষদ, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই’ অযুহাত তুলে বলছে এমন পরিস্থিতিতে কীসের নির্বাচন। পাশাপাশি মৌলিক বিভিন্ন বিষয়ে সংস্কার এবং নির্বাচনের আগেই জুলাই সনদ বাস্তবায়নের কথা বলছে এসব দল।
জামায়াত আমির ড. মুহম্মদ শফিকুর রহমান সম্প্রতি একাধিকবার মন্তব্য করেছেন, নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষতা প্রমাণে জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন দিতে হবে। এটাও বলেছেন, বর্তমানে দেশের আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি অনেক খারাপ, নির্বাচনের পরিবেশ নেই। পাশাপাশি নির্বাচনের আগে বিচার, সংস্কার করতে হবে। জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করতে হবে। দলটির আরও একটি আলোচিত দাবি, সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব বা পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন।
প্রায় একই দাবি এনসিপিরও। নির্বাচনের আগে দলটির চাওয়া বিচার ও মৌলিক সংস্কার। জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও সংবিধানে অর্ন্তভুক্তসহ আরো নানা দাবি পূরণ না হলে নির্বাচনে যাবে না, এমন বক্তব্যও তাদের শীর্ষ নেতার কাছ থেকে শোনা গেছে। তারাও চায় পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন। তাছাড়া নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে দলটি। সম্প্রতি দলটির প্রধান নাহিদ ইসলাম একটি রাজনৈতিক দলের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেছেন, বর্তমান প্রশাসন একটি দলের হয়ে কাজ করছে, তাই নিরপেক্ষতা হারিয়েছে। গণঅধিকার পরিষদ, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনও পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন ও সংস্কারের দাবি জানাচ্ছে। বর্তমান প্রশাসন নিরপেক্ষ নয় বলেও অভিযোগ তাদের।
কিন্তু দীর্ঘদিন ক্ষমতার বলয়ে না থাকা দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপিকে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই’ এ অভিযোগ করতে শোনা যায়নি। প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করে সরকারের কাছে অতি দ্রুত একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দাবি করেছে দলটি।
গত ৯ জুলাই রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, ডিসেম্বরের মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্বাচনের সব প্রস্তুতি শেষ করা নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ লক্ষ্যে ৮ লাখ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়োজিত থাকবে বলে জানানো হয়। তাছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে (পুলিশ, বিজিবি, কোস্টগার্ড) ১৭ হাজার নতুন সদস্য নেওয়া হচ্ছে। তাদের নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই শেষ করার নির্দেশনা দেন প্রধান উপদেষ্টা।
এদিকে বিগত সময়ে সরাসরি আওয়ামী এজেন্ডা বাস্তবায়কারী তিন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) রাকিব, হুদা ও আউয়াল পরবর্তী যুগে বর্তমান সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয় ২০২৪ সালের ২১ নভেম্বর। বর্তমান কমিশন মোটামুটি রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত বলেই মনে করেন বিশ্লেষকরা।
তাছাড়া ফেব্রুয়ারির মধ্যে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, এ লক্ষ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছে কমিশন। রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধন ও প্রতীক নিয়ে কাজ করছে। নির্বাচন সুষ্ঠু করতে মাঠ প্রশাসন ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৫ জুলাই একযোগে ৫১ জন কর্মকর্তাকে বদলি করেছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি।
সম্প্রতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেছেন, কমিশন ভোটের প্রস্তুতি এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। নির্বাচনে রেফারির ভূমিকায় থাকবে ইসি। এ লক্ষ্যে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরিতে বদ্ধপরিকর। কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষভাবে কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সবমিলিয়ে একদিকে যেমন নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে তেমনি অন্যদিকে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই অজুহাত তুলে নির্বাচন বয়কট করার কথাও বলছে কেউ কেউ। এ ব্যাপারে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, জামায়াত, এনসিপিসহ কিছু দলের ‘নির্বাচনে সমতল মাঠ নেই’ এ দাবির পেছনে তেমন শক্ত যুক্তি নেই। তবে ভিন্ন উদ্দেশ্য থাকতে পারে। তারা বলেন, বর্তমান সরকার সরাসরি কোন রাজনৈতিক দল নয়। এরপরও দেশের মানুষ বিশ্বাস করে জামায়াত ও এনসিপি সরকারের আনুগত্য পাওয়া রাজনৈতিক দল। নির্বাচন হলে কার লাভ, কার ক্ষতি, এটা জনগণ বুঝে ফেলেছে।
বিশ্লেষকরা আরো বলেন, সিইসি নাসির উদ্দিনকে তো বিএনপি বা আওয়ামী লীগ নিয়োগ দেয়নি। প্রশাসনে বিএনপি নিজের লোক নিয়োগ দেয়নি গত প্রায় ১৮ বছর। তাই মাঠ নিরপেক্ষ নয়, নির্বাচনের পরিবেশ নেই, এ দাবিতে নির্বাচন না করার যে হুমকি কিছু দল দিচ্ছে, তার পেছনে নির্বাচন পেছানোই আসল উদ্দেশ্য। তাছাড়া পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবিও এখন বাস্তবায়ন অসম্ভব। পিআর পদ্ধতি নিয়ে জামায়াতের তৎপরতা মূলত ‘নির্বাচন বিলম্বিত করার একটি অপচেষ্টা’ ছাড়া কিছু নয়।
অবশ্য বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে- কিছু দল সুপরিকল্পিতভাবে নির্বাচন না হওয়ার ষড়যন্ত্র করছে। দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান একাধিকবার মন্তব্য করেছেন, যারা বলছে নির্বাচনে সমতল মাঠ নেই, যারা বলছে পিআর পদ্ধতি ছাড়া নির্বাচন মানব না, তাদের উদ্দেশ্য ভিন্ন। এসব রাজনৈতিক দল নির্বাচন বানচাল করতে চায়। এসব ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে দলীয় নেতা-কর্মীদের সজাগ থাকারও নির্দেশ দেন তিনি।
ভিওডি বাংলা/ এমপি
গোপালগঞ্জে কারফিউ ও ১৪৪ ধারা তুলে নেওয়া হলো
গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি
গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশ ঘিরে হামলা, সংঘর্ষ …

দ্রুতই অমীমাংসিত বিষয়ে ঐকমত্য হবে-আলী রীয়াজ
নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের চূড়ান্ত প্রস্তাবনা দেয়া …

টেকসই বিনিয়োগে বৈশ্বিক প্রতিশ্রুতি জরুরি: পরিবেশ উপদেষ্টা
নিজস্ব প্রতিবেদক
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ …
