এখনো স্বৈরাচারের গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে: ডা. জাহিদ হোসেন


নিজস্ব প্রতিবেদক
গণতন্ত্র ফেরানোর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীরা ঘাপটি মেরে আছে বলে সকলকে সর্তক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন। শুক্রবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এই আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘আমাদের ভেতরে যারা আজকে গণতন্ত্রকে নস্যাৎ করতে চাই সেই ষড়যন্ত্রকারীরাও ঘাপটি মেরে আছে তাদের চরিত্র উন্মোচন করা আজকে আমাদের দায়িত্ব। মিটফোর্ডের ঘটনার পর দ্রুততার সাথে বিএনপি ও তার অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন ব্যবস্থা গ্রহন করেছে এবং দাবি তুলেছে দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই। তারপরেও আমাদের নেতা তারেক রহমানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ট্যাগিং করা হচ্ছে। আপনারা একবারও ভাবেন না আপনারা কী করছেন? আপনারা কেনো আগুন নিয়ে খেলার চেষ্টা করছেন, অন্যের ক্রীড়ানক হয়ে কেনো আপনারা দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে বিনষ্ট করার চেষ্টা করছেন।সকলকে সর্তক থাকতে হবে, সকলকে ধরয্য ধরতে হবে। ওদের(ষড়যন্ত্রকারীদের) উস্কানিতে পা দেয়া যাবে না।'
ঐক্যবিষ্টকারীদের উদ্দেশ্যে অধ্যাপক জাহিদ বলেন, ‘রাজনীতি করুন, ময়দানে আসুন। বিএনপি ও সমমনা দলগুলো একত্রিত কর্মসূচি নিয়ে এসেছে। আপনাদের কি কর্মসূচি আছে সেটি নিয়ে আসুন। কর্মসূচির নামের খবর নাই। কথায় কথায় পিআর(সংখ্যানুপাতিক হারে ভোট ব্যবস্থা) বলবেন, কথায় কথায় স্থানীয় সরকার নির্বাচন চাই। আরে ভাই, গণতন্ত্রের লড়াই জাতীয় নির্বাচনের জন্য। স্থানীয় সরকারের নির্বাচনের জন্য গণতন্ত্রের লড়াই হয় না। আর পিআর পদ্ধতি বাংলাদেশে ৫৪ বছর কেনো ১৫৪ বছরেও কোনো প্রাকটিস হয় নাই। আজকে কেনো এই সমস্ত কথা বলে বিবাদ-দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করছেন। তার অর্থ হচ্ছে আপনারা গণতন্ত্রকে প্রলম্বিত করতে চান, গণতন্ত্র যাতে ফিরে না আসে তাহলে হয়ত আপনাদের অন্য সুবিধা আছে। মনে রাখবেন, জনগণকে ক্ষমতাহীন করে বেশিদিন বেশি দিন যদি রাখতে চান, এই জনগণ কিন্তু ফুঁসে উঠবে। তখন সেই আগুনে আপনারা জ্বলের পুড়ে ছারখার হয়ে যাবেন। আমি সকলকে উদার্ত কন্ঠে আহ্বান জানাতে চাই, ধরয্য ধরুন এবং ঐক্যবদ্ধভাবে স্বৈরাচারকে যেমন রুখেছি, তারা পালিয়ে গেছে এবং একইভাবে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার যে লড়াই সেই লড়াইয়ে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে। কোনো অবস্থাতেই ষড়যন্ত্রকারীরা কামিয়াবী হবে না বলেন তিনি।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের উদ্যোগে দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ বিনষ্টের ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে এই সমাবেশ হয়। সমাবেশের পর মৌন মিছিল কদম ফোয়ারা চত্বর ঘুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এসে শেষ হয়।
‘সবখানে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিম, গোপালগঞ্জে কেনো এরকম হলো’
এনসিপির কর্মসূচির প্রসঙ্গ টেনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, ‘‘ মার্চ ফর গোপালগঞ্জ বলেন, আর পদযাত্রা বলেন, আমি তো বলি, সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সরকার নিদারুন ভাবে ব্যর্থ হয়েছে। কারণ এই গোপালগঞ্জ আপনাদের খেয়াল আছে, কোটালিপাড়ায় বোমার হামলার কথা… প্রধানমন্ত্রী(শেখ হাসিনা) থাকা অবস্থায় উনার এখানে এতো কিছু থাকার পরে কিভাবে বোমা ফুটলো? সেখানে তখন কোথায় ছিলো গোয়েন্দা বাহিনী। অর্থাৎ ষড়যন্ত্র যদি না হয় তাহলে এরকম ঘটনা ঘটানো যায় না। গতকালকে তো ফরিদপুরে সুন্দর প্রোগ্রাম হলো সেখানে তো কিছু হলো না… গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, রাজবাড়ি সবই তো কাছাকাছি। আপনারা নড়াইল গেলেন কিছু হলো না, সারা বাংলাদেশ ঘুরে বেড়াচ্ছেন কোথাও কিছু হয় নাই ওখানে কেনো হচ্ছে? কাজেই মনে রাখতে হবে স্বৈরাচারের দোসরদের ওপর দোষ চাপাচ্ছি ঠিকই আছে। কিন্তু আমাদের ভেতরে যারা আজকে গণতন্ত্রকে নসাৎ করতে চাই সেই ষড়যন্ত্রকারীরাও ঘাপটি মেরে আছে তাদের চরিত্র উন্মোচন করা আজকে আমাদের দায়িত্ব।
‘ঐক্য বিনষ্ট করলে কী হয় কিছু আলামত পাওয়া যাচ্ছে’
অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে পেশাজীবীদের অবদানকে ছোট করে দেখার সুযোগ নাই। আজকে মনে রাখতে হবে, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লড়াইয়ে রাজনীতিবিদরাও ছিলেন, পেশাজীবীরাও ছিলেন এবং আছেন। এই অবস্থায় আমরা যখন দেখতে পাই রাজনীতিবিদদের মধ্যে ছোট ছোট স্বার্থের জন্য অনৈক্য তখন আমরা হতাশাগ্রস্থ হই। আমরা সাবধান করে দেই আপনারা(রাজনীতিবিদরা) দ্বিধা-বিভক্তি হবেন না। আপনারা ঐক্য বিনষ্ট করবেন । ঐক্য বিনষ্ট করলে কী হয়ে সেটি সত্যিকার অর্থেই কিছু আলামত পাওয়া যাচ্ছে। জুলাই আন্দোলনে তো কোনো ধরণের অনৈক্য ছিলো এক কাতারে ছিলাম। তারপরে যখন আমরা দেখলাম, প্রধান উপদেষ্টা বললেন, শুধু মাত্র এরা (ছাত্ররা) আমাকে ক্ষমতায় বসিয়েছে তখন বিভক্তি শুরু হলো। কারণ আন্দোলনে যারা ছিলেন তখন সেই আন্দোলনে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, পেশাজীবীরা নিজেরা নিজেদেরকে অত্যন্ত ছোট মনে করলেন। আমরা ইউনুস সাহেবের কাছ থেকে বড় কিছু আশা করেছিলাম। তারপরও আমরা সবাই মিলে উনার অন্তবর্তীকালীন সরকারকে সমর্থন দিয়েছি এবং দিয়ে যাচ্ছি।'
‘মবজাস্টিস প্রসঙ্গে’
জাহিদ বলেন, ‘যেকথাগুলো মাঠে এসেছে… মবোক্রেসি অথবা মবজাস্টিস। যখনই কোনো বিনা বিচারে কিছু হচ্ছে বলা হচ্ছে, কঠোরভাবে দমন করা হবে। কিন্তু কঠোরতার কিছুই দেখা যাচ্ছে না। মাঠে সেনাবাহিনী ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার নিয়ে আছে, র্যাব আছে, বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী থাকার পরেও আজকে দুস্কৃতিকারীরা কিভাবে সেই মিপফোর্ড বলেন, মুরাদনগর বলেন, খুলনা বলেন, কক্সবাজার বলেন, সেই পটিয়া বলেন, সেই পাটগ্রাম বলেন, কচুয়া বলেন এবং গোপালগঞ্জের সর্বশেষ ঘটনা বলেন। কিভাবে এসব ঘটনা ঘটলো আজকে দেশের মানুষ জানতে চায়। আপনারা কি এই সমস্ত ঘটনা সত্যি সত্যি এসব ঘটনা প্রতিরোধ করার জন্য আন্তরিক? না সত্যি আপনারা মুখে এক কথা বলেন, আরেক কথা মনে মনে পোষন করে।'
তিনি বলেন, ‘অনেক উপদেষ্টার কথা শুনলে মনে হয় যেন উনারা সারা জীবন ক্ষমতায় থাকবেন, জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি। কিন্তু মনে রাখতে হবে আপনারা জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি নন আন্দোলন-সংগ্রামে যারা ছিলেন তাদের সমর্থিত হয়ে একটি নির্ধারিত সময়ের জন্য নির্ধারিত দায়িত্ব পালনে আপনারা দায়িত্ব নিয়েছেন। এই দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করলে জনগণ আপনাদেরকে ফুলের মালা দেবে। আর যদি ব্যর্থ হন অর্থা গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে আপনারা যদি টালবাহানা করেন মনে রাখবেন যেই জনগণ স্বৈরাচারকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করে সেই জনগণ আগামী দিনে কোন ইতিহাস সৃষ্টি করবে সেটি আপনাদের মনে রাখা উচিত। কোনো অবস্থাতেই এমন কোনো অনৈক্যের কথা বলবেন না, এমন কোনো দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রে জড়াবেন জড়াবেন না। মনে রাখবেন, ওই কথাটি যে, দিল্লীও নয়, পিন্ডিও নয়, সিদ্ধান্ত হবে বাংলাদেশে, সবার আগে বাংলাদেশে।'
‘এটা কিসের আলামত’
গণফোরামের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী গোপালগঞ্চের বলেন, ‘গোপালগঞ্জের তদন্ত কমিটির সময় দিয়েছে ১৫ দিন। এটা কি জাতির সাথে মস্করা করেন। তদন্ত তো দুইদিনে রিপোর্ট দিতে পারেন বড়জোর নইলে এক সাপ্তাহ। ১৫ দিন করার মানে কী? কারণ ঘটনা ঘটিয়েছে এনসিপি। তোমরা সারা দেশে পদযাত্রা করছো… হঠাৎ করে বলছো ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’। এটার উদ্দেশ্য কি? এখন আরো উত্তেজক বক্তব্য দিচ্ছে। বাংলাদেশে একটা অনাকাঙ্কিত পরিবেশ সৃষ্টির জন্য …. এনসিপিসহ কয়েকটি দল বলছে যে, বাংলাদেশে নির্বাচন করার কোনো পরিবেশ নাই। কিসের আলামত? দয়া করে এসব বন্ধ রাখেন।'
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুস সরকারের প্রতি ইংগিত করে তিনি বলেন, ‘আপনাদের লালিত এই সংগঠন সারাদেশে যে উত্তেজনা সৃষ্টি করছে, দয়া করে আগামী দিনে বাংলাদেশকে আরেকটি বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দেবেন অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুস সাহেব। আপনাকে নোবেল পেয়েছেন, নোবেল লরেটের মতো কাজ করেন। কিন্তু যে ধরনের ঘটনাবলী আপনি এখানে সৃষ্টি করছেন… মবজাস্টিসের নামে মানু্ষের ন্যায্য বিচার অধিকার পাওয়ার থেকে বঞ্চিত করছেন। এটা বাংলাদেশের পক্ষে যাবে না।আমরা পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ আমরা বলছি, জনাব ইউনুস সাহেব সময় থাকতে বাংলাদেশের জনগণের আকাংখা বুঝে দ্রুত সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা নিন। নইলে আপনিও ফখরুদ্দিন, মইন উদ্দিনের মতো পালিয়ে যেতে বাধ্য হবে.. আমরা আপনাদেরকে হুশিয়ারি করে দিচ্ছি।'
সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব কাদের গণি চৌধুরী সঞ্চালনায় সমাবেশে সৈয়দ আলমগীর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, অধ্যাপক লুৎফুর রহমান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুল আলম সেলিম, অবসরপ্রাপ্ত সচিব আবদুল বারী, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশসের অধ্যাপক রফিকুল কবীর লাবু, এগ্রিকালচারিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের শামীমুর রহমান শামীম, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের রফিকুল ইসলাম, শিক্ষক-কর্মচারি ঐক্যজোটের জাকির হোসেন, নার্সেস এ্যাসোসিয়েশনের জাহানারা সিদ্দিকী, সাংবাদিক মোরসালিন নোমানি,রাশেদুল হক, সাঈদ খান প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।
ভিওডি বাংলা/ডিআর
গণতন্ত্র নস্যাতে দুষ্টচক্র নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করছে: মঈন খান
নিজস্ব প্রতিবেদক
দেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বিএনপির স্থায়ী …

‘পিআর পদ্ধতি খায়, না মাথায় দেয়’: সালাহউদ্দিন আহমেদ
নিজস্ব প্রতিবেদক
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘পিআর …

এনসিপি নেতাদের পলায়ন জাতির জন্য লজ্জার: ডা. আউয়াল
নিজস্ব প্রতিবেদক
শহীদ পরিবারের কান্না এখনো থামেনি, কবর বাঁধাইয়ের জন্য …
