পাবনায় ৩ তরুণের অসহায় মানুষের সেবা করার প্রত্যয়


পাবনা প্রতিনিধি
আশিকুর রহমান, মুহাম্মদ ফাহিম রহমান ধ্রুব ও খন্দকার গৌরব মুস্তাফা। এরা সবাই পাবনার উজ্জল নক্ষত্র। এবারের ৪৪তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন তারা।
আশিক শিক্ষায়, ধ্রুব স্বাস্থ্যে এবং গৌরব প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। চাকুরী জীবনে প্রবেশের পর সমাজের অবহেলিত, অসহায় মানুষের সেবা করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন পাবনার এই তিন তরুণ তুর্কী।
পাবনা পৌরসভার ঘোষপাড়া মহল্লার বাসিন্দা খন্দকার গোলাম মুস্তাফা-মরহুমা গুলশান আরা দম্পতির একমাত্র সন্তান খন্দকার গৌরব মুস্তাফা। বাবা বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী পদে কর্মরত ছিলেন এবং ২০১৫ সালে অবসর গ্রহণ করেন। মা মরহুমা গুলশান আরা একই প্রতিষ্ঠানে ডেটা এন্ট্রি অপারেটর পদে চাকরি করতেন। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে তিনি ইন্তেকাল করেন।
গৌরব ২০১১ সালে পাবনা জেলা স্কুল থেকে এসএসসি ও ২০১৩ সালে পাবনার শহীদ বুলবুল সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ-৫ অর্জন করেন। এরপর ভর্তি হন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) যন্ত্রকৌশল বিভাগে। ২০১৮ সালের অক্টোবরে কৃতিত্বের সাথে স্নাতক সম্পন্ন করেন তিনি।
স্নাতকের পরই শুরু করেন বিসিএস পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি। পড়াশোনার পাশাপাশি গৌরব একজন প্রশিক্ষিত সংগীত শিল্পী, যা তাকে মানসিকভাবে দৃঢ় থাকতে সহায়তা করেছে। এই দীর্ঘ প্রস্তুতির ফল এসেছে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়ার মাধ্যমে।
নিজের অনুভূতি জানাতে গিয়ে গৌরব বলেন, 'আমার সফলতার জন্য সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব আমার মায়ের। মা সবসময় আমাকে বলতেন-ভাল করে পড়ো, ইনশাআল্লাহ একদিন অবশ্যই সফল হবে। আজ তিনি আমার পাশে নেই, কিন্তু আমি জানি, আজকের দিনে তিনি পাশে থাকলে সবচেয়ে বেশি খুশি হতেন। বাবাও সবসময় সাপোর্ট দিয়ে গেছেন, সাহস জুগিয়েছেন-বলতেন, চেষ্টা করো, সবসময় পাশে আছি।'
অপরদিকে, স্বাস্থ্য ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন পাবনার আরেক সন্তান মুহাম্মদ ফাহিম রহমান ধ্রুব। পাবনা পৌরসভার শালগাড়িয়া কসাইপট্টি মহল্লার মো. হাফিজুর রহমান-মোছা. নাহিদ খানমের সন্তান তিনি। দুই ভাইয়ের মধ্যে ধ্রুব বড়। বাবা হাফিজুর রহমান পাবনা সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন। ২০২২ সালের নভেম্বরে তিনি অবসরে যান। মা গৃহিণী। ব্যক্তিগত জীবনে অবিবাহিত ধ্রুব।
ফাহিম রহমান ধ্রুব যথাক্রমে ২০১৩ সালে পাবনা জেলা স্কুল থেকে এসএসসি ও ২০১৫ সালে পাবনার শহীদ বুলবুল সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ-৫ অর্জন করেন। এরপর ভর্তি হন ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজে। ২০২১ সালে কৃতিত্বের সাথে এমবিবিএস সম্পন্ন করেন তিনি। ২০২৩ সালে সেখানে ইন্টার্ন শেষ করেন। ইন্টার্নি চলা অবস্থায় বিসিএস এর প্রস্তুতি শুরু করেন তিনি।
অনুভূতি জানাতে গিয়ে ধ্রুব বলেন, ‘আমার বাবা-মা সবসময় আমাকে উৎসাহ-সাহস আর সাপোর্ট দিয়েছেন। তাদের অবদান সবচেয়ে বেশি। এর সঙ্গে আমার শিক্ষক আর ব্যাচমেটদেরও অবদান রয়েছে। সবার দোয়া, ভালবাসা আর সহযোগিতায় আজ আমি বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছি।’
এছাড়া শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন আশিকুর রহমান (২৮)। তিনি পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার গোকুলনগর গ্রামের শফিকুল ইসলাম-মৃত আলেয়া খাতুন দম্পতির সন্তান। চার ভাই আর এক বোনের মধ্যে তৃতীয় আশিক।
আলপকালে আশিক জানান, 'আমার বাবা একজন সাইকেল মেকানিক ছিলেন। প্রতিদিন বাড়ি থেকে বেশকিছু দূরে খিদিরপুর বাজারে গিয়ে সাইকেল মেরামতের কাজ করতেন। যা আয় করতেন তা দিয়ে কোনোমতে সংসার আর আমাদের ভাইবোনদের লেখাপড়ার খরচ চালাতেন। মাত্র ৬ বছর বয়সে ২০০২ সালে মা মারা যান। বাবা আমাকে আগলে রাখতেন। কখনও মায়ের অভাব বুঝতে দেননি। বাবা আর মেঝো ভাই সবুজের জন্য আজ আমি এখানে।'
আটঘরিয়া উপজেলার খিদিরপুর শহীদ আব্দুল খালেক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১২ সালে এসএসসি, নটরডেম কলেজ, ঢাকা থেকে ২০১৪ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন আশিক। এরপর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতি বিভাগ থেকে ২০১৯ সালে বিএ (অনার্স) এবং একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০২০ সালে একই বিষয়ে মাস্টার্স পাশ করেন তিনি।
তারপর থেকেই বিসিএস এর প্রস্তুতির পাশাপাশি চাকুরীর চেষ্টা করতে থাকেন তিনি। ২০২৪ সালের ২০ জুন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এ সহকারি পরিচালক হিসেবে যোগ দেন। আর এবার ৪৪তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন আশিক।
বিসিএস প্রত্যাশীদের জন্য পরামর্শ দিতে গিয়ে এই তিন তুর্কী বলেন, ''সব সময় সৎ আর পজিটিভ চিন্তা করতে হবে। আর নিজের উপর আত্মবিশ্বাস রাখতে হবে। নেগেটিভ কোনো কিছু ভাবা যাবে না। নিজের উপর আত্মবিশ্বাস শক্ত রাখতে হবে। প্রতিদিন নিয়মিত গড়ে ৪ ঘণ্টা করে পড়াশোনায় সময় দিতে হবে। এছাড়া নিজের সাবজেক্টের বাইরে জাতীয়, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিষয়গুলো আয়ত্বে রাখতে হবে।'
তারা আরো বলেন, 'ভাল কিছু অর্জন করতে হলে অবশ্যই ধৈর্যের সঙ্গে চেষ্টা করতে হবে। নিয়মিত পড়াশোনা করতে হবে, নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে কঠোর পরিশ্রম দিয়ে। ব্যর্থতা আসতেই পারে, কিন্তু তা যেন লক্ষ্য থেকে সরিয়ে না দেয়। ভাগ্য সহায় হলে অবশ্যই সফলতা আসবে।'
ভবিষ্যত জীবনে তারা সমাজের অসহায়, সুবিধা বঞ্ছিত ও অবহেলিত মানুষের সেবা করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন তারা। এজন্য সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন তারা।
ভিওডি বাংলা/ এমএইচ
চাঁদাবাজি: গাজীপুর বিএনপির ৪ নেতা বহিষ্কার
গাজিপুর প্রতিনিধি:
চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মের অভিযোগে গাজীপুর বিএনপির চার নেতাকে …

পাকুন্দিয়ায় এসিল্যান্ডসহ ২৬জনের বিরুদ্ধে মামলা
কিশোরগঞ্জ জেলা প্রতিনিধিঃ
কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় সদর ঈদ্গাহ মাঠের পরিচালনা কমিটির …

‘বিএনপি নির্বাচিত হলে প্রতিটি ঘরে ফ্যামিলি কার্ড দেওয়া হবে’
টাঙ্গাইল প্রতিনিধি
বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু বলেছেন, আমাদের …
