• ঢাকা বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩ পৌষ ১৪৩১

১০ মাসে ১৬৩ প্রাণ: মব সহিংসতায় আতঙ্কিত দেশ

   ৫ জুলাই ২০২৫, ১২:২১ পি.এম.
প্রতীকী ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশজুড়ে বেড়ে চলেছে মব সহিংসতার ভয়াবহতা। গত ১০ মাসে দেশে ২৫৩টি মব সহিংসতার ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ১৬৩ জন এবং আহত হয়েছেন ৩১২ জন। কুমিল্লা, গাজীপুর, লালমনিরহাটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এই ধরনের সহিংসতার শিকার সাধারণ মানুষ ও শ্রমিকরা। নিরাপত্তাহীনতা, আইন অবজ্ঞা এবং বিচারহীনতার কারণে এই প্রবণতা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে।

সম্প্রতি কুমিল্লার মুরাদনগরের কড়ইবাড়িতে চুরির অপবাদে এক মা ও তাঁর ছেলে-মেয়েকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। নিহতরা হলেন রোকসানা আক্তার রুবি (৫৫), রাসেল মিয়া (৩৮) এবং জোনাকি আক্তার (৩২)। নিহত রাসেলের স্ত্রী মীম আক্তার বলেন, "বিশ্বাসই করতে পারিনি মানুষ এতটা নির্মম হতে পারে।" পুলিশ এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।

গাজীপুরের কোনাবাড়ীতে ১৯ বছরের শ্রমিক হৃদয়কে চুরির অভিযোগে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। নিহত হৃদয় টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার বাসিন্দা ও স্থানীয় কারখানার শ্রমিক ছিলেন।

মানবাধিকার সংগঠনগুলোর তথ্য অনুযায়ী, গত ১০ মাসে ২৫৩টি মব সহিংসতায় ১৬৩ জন নিহত ও ৩১২ জন আহত হয়েছে। শুধু জুন মাসেই ৪১টি ঘটনার মধ্যে ১০ জন নিহত এবং ৪৭ জন আহত হয়েছে। আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) জানিয়েছে, জানুয়ারি-মে সময়ে ৭৮ জন নিহত হয়। হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির হিসাবে, গত ৯ মাসে ২০২টি ঘটনার মধ্যে ১৩১ জন নিহত হয়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সামাজিক অস্থিরতা, আইনের শাসনের অভাব, অর্থনৈতিক সংকট, রাজনৈতিক বিরোধ এবং বিচারহীনতা মব সহিংসতার পেছনে মূল ভূমিকা রাখছে। অপরাধ বিশ্লেষক ড. তৌহিদুল হক বলেন, "আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও রাজনৈতিক দলের কঠোর পদক্ষেপ ছাড়া এই সহিংসতা বন্ধ হবে না।"

আইজিপি বাহারুল আলম বলেন, "মব সহিংসতা নিয়ন্ত্রণে চেষ্টা চলছে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। অপরাধীরা পার পাবে না।" তিনি স্বীকার করেন, পুলিশের একার পক্ষে এই সহিংসতা ঠেকানো সম্ভব নয়, সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

সাম্প্রতিক আলোচিত ঘটনা

  • রাজধানীতে আল আমীন নামে তরুণ গণপিটুনিতে নিহত।

  • লালমনিরহাটে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে পিটুনির শিকার পরেশ চন্দ্র শীল ও তাঁর ছেলে।

  • উত্তরায় সাবেক সিইসি কে এম নুরুল হুদাকে মব হেনস্তা।

  • গুলশান, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, ধানমণ্ডিতে মব হামলা।

  • সিরাজগঞ্জের কামারখন্দে মানসিক প্রতিবন্ধী শামীম হোসেন হত্যাকাণ্ড।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, মব সহিংসতা কোনো সভ্য সমাজে গ্রহণযোগ্য নয়। বিচার হবে আদালতে, রাস্তায় নয়।" বাম গণতান্ত্রিক জোটও এক বিবৃতিতে সরকারের নীরব ভূমিকার কঠোর সমালোচনা করে সহিংসতা বন্ধের দাবি জানিয়েছে।

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা বলেন, মব সহিংসতা বন্ধ না হলে বাংলাদেশ ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হবে। সরকারের প্রধান দায়িত্ব মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

বাংলাদেশে মব সহিংসতার লাগামহীন বিস্তার সামাজিক স্থিতিশীলতা ও আইনের শাসনের জন্য বড় হুমকি। অবিলম্বে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, রাজনৈতিক সদিচ্ছা, আইনের কঠোর প্রয়োগ এবং জনসচেতনতার মাধ্যমেই এই সহিংসতার অবসান ঘটাতে হবে। নাগরিক সমাজ, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এবং সরকার—সবার সম্মিলিত উদ্যোগ ছাড়া এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়।

ভিওডি বাংলা/ডিআর

  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
চট্টগ্রামে রানওয়েতে আটকে পড়ে হজযাত্রীদের ফ্লাইট
চট্টগ্রামে রানওয়েতে আটকে পড়ে হজযাত্রীদের ফ্লাইট
সরকারি চাকরিতে পদ ফাঁকা!
সরকারি চাকরিতে পদ ফাঁকা!
শহিদ আনাসের চিঠি হাতে মায়ের আর্তনাদ
শহিদ আনাসের চিঠি হাতে মায়ের আর্তনাদ