• ঢাকা বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩ পৌষ ১৪৩১

আদর্শ বাবার গুরুত্ব ও দায়িত্ব

   ২৬ জুন ২০২৫, ০১:১৬ পি.এম.
ছবি: সংগৃহীত

ফারজানা ইসলাম

শুধুমাত্র সন্তানদের জন্য অর্থ উপার্জন করলেই একজন বাবা আদর্শ বাবা হয়ে যান না। একজন আদর্শ বাবার ভূমিকা অনেক বিস্তৃত এবং তা শুধুমাত্র অর্থনৈতিক দায়িত্ব পালনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। একটি সন্তানের মানসিক বিকাশ, নৈতিক শিক্ষা ও আত্মবিশ্বাস তৈরির ক্ষেত্রে বাবার সক্রিয় উপস্থিতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান সমাজে আদর্শ বাবার অভাব অনেক সমস্যার জন্ম দিচ্ছে—সন্তানরা সঠিক মূল্যবোধ, আবেগ নিয়ন্ত্রণ, এবং পারিবারিক বন্ধনের গুরুত্ব শিখতে পারছে না। তাই একজন আদর্শ বাবা হওয়ার জন্য কী কী গুণ থাকা উচিত, তার বিস্তারিত আলোচনা করা আবশ্যক।

১. সন্তানের জন্য সময় দেওয়া

একজন আদর্শ বাবা তার ব্যস্ততা সত্ত্বেও সন্তানদের জন্য সময় বরাদ্দ করেন। গবেষণায় দেখা গেছে, বাবারা যখন সক্রিয়ভাবে সন্তানের জীবনে উপস্থিত থাকেন, তখন তাদের আত্মবিশ্বাস, একাডেমিক সাফল্য এবং সামাজিক আচরণ উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত হয়। সময় দেওয়া মানে শুধু পাশেই থাকা নয়, বরং মানসিকভাবে জড়িত থাকা, সন্তানদের সঙ্গে গল্প করা, পড়াশোনায় সাহায্য করা, কিংবা একসাথে খেলাধুলা করাও অন্তর্ভুক্ত।

২. সন্তানের অনুরোধ ও আবদারের ভাষা বোঝা

সন্তানের আবেগ বোঝা এবং তাদের কথা মনোযোগ দিয়ে শোনা একজন বাবার অন্যতম দায়িত্ব। শিশুরা অনেক সময় সরাসরি কিছু বলতে না পারলেও তাদের আচরণ ও চাহিদার মাধ্যমে অনুভূতি প্রকাশ করে। একজন আদর্শ বাবা এই বার্তাগুলোকে বুঝে সেই অনুযায়ী প্রতিক্রিয়া জানান। এর ফলে শিশু বাবার কাছে নিরাপদ এবং ভালোবাসার আশ্রয় খুঁজে পায়, যা তার মানসিক স্বাস্থ্য ও সম্পর্ক উন্নয়নে সহায়ক।

৩. সন্তানকে নিয়ে বাইরে ঘুরতে যাওয়া

বাবা-সন্তান সম্পর্ক উন্নয়নের অন্যতম উপায় হলো একসাথে সময় কাটানো, বিশেষ করে ঘুরতে যাওয়া। এক গবেষণায় দেখা গেছে, পরিবার নিয়ে প্রাকৃতিক পরিবেশে সময় কাটালে শিশুদের মানসিক চাপ কমে যায় এবং পারস্পরিক সম্পর্ক দৃঢ় হয়। একজন আদর্শ বাবা সন্তানকে নিয়ে মাঝে মাঝে পার্ক, মিউজিয়াম, গ্রাম কিংবা আত্মীয়দের বাড়িতে ঘুরতে যান—যা সন্তানের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা বাড়ায়।

৪. সন্তানের মাকে সম্মান ও ভালোবাসা দেখানো

একজন আদর্শ বাবা শুধু সন্তানের সঙ্গেই নয়, সন্তানের মায়ের সঙ্গেও দায়িত্বশীল সম্পর্ক বজায় রাখেন। গবেষণা অনুযায়ী, যেসব পরিবারে বাবা-মায়ের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা থাকে, সেসব পরিবারের শিশুদের মানসিক স্থিতিশীলতা ও আচরণ অনেক উন্নত হয়। শিশুরা মা-বাবার সম্পর্ক দেখে শিখে, এবং ভবিষ্যতে তাদের নিজস্ব সম্পর্কেও তা প্রভাব ফেলে। তাই সন্তান পালনের পুরো দায়িত্ব মায়ের ওপর চাপিয়ে না দিয়ে, একজন আদর্শ বাবা সক্রিয়ভাবে মায়ের সহযোগিতা করেন এবং তার পরিশ্রমের মূল্য দেন।

উপসংহার

আর্থিক দায়িত্ব পালন একজন বাবার গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলেও, আদর্শ বাবা হওয়ার জন্য আরও অনেক দায়িত্ব রয়েছে। সন্তানকে সময় দেওয়া, আবেগ বোঝা, একসাথে সময় কাটানো, এবং মায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া—এই সব গুণ একজন বাবাকে সত্যিকার অর্থে ‘আদর্শ বাবা’ করে তোলে। একজন আদর্শ বাবার উপস্থিতি একটি শিশুর জীবনে আশীর্বাদ স্বরূপ। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সুনাগরিক গড়ে তুলতে আমাদের সমাজে আদর্শ বাবার ভূমিকাকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা অত্যন্ত প্রয়োজন।

লেখক: নারী উদ্যোক্তা, লেখক ও গবেষক।

ভিওডি বাংলা/ডিআর

[নিবন্ধ, সাক্ষাৎকার, প্রতিক্রিয়া প্রভৃতিতে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। ভিওডি বাংলা সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক, আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের, ভিওডি বাংলা কর্তৃপক্ষের নয়] 

  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
সুরাজনীতি এমন এক নদী যা শান্তির সাগরে মিশবেই
সুরাজনীতি এমন এক নদী যা শান্তির সাগরে মিশবেই
গণতন্ত্রকামী ভোটারদের অপমান করলেন ড. ইউনূস
গণতন্ত্রকামী ভোটারদের অপমান করলেন ড. ইউনূস
উৎসবের আনন্দ হোক নিশ্চিন্ত ও নিরাপদ
উৎসবের আনন্দ হোক নিশ্চিন্ত ও নিরাপদ